পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ૨૨ઉ যখন চন্দ্রনাথবাবুর জীবনের বাতায়ন থেকে সত্যকে দেখতে পাই তখন ও-গানের মানে একেবারেই বদলে যায়, তখন বিদ্যাপতি কহে কৈসে গোরায়বি হরি বিনে দিনরাতিয়া ? যত দুঃখ যত ভুল সব যে ওই সত্যকে না পেয়ে । সেই সত্যকে জীবন ভরে না নিয়ে দিনরাত এমন করে কেমনে কাটবে? আর তো পারি নে, সত্য, তুমি এবার আমার শূন্ত মন্দির ভরে দাও । বিমলার আত্মকথা সেই সময়ে হঠাৎ সমস্ত বাংলাদেশের চিত্ত যে কেমন হয়ে গেল তা বলতে পারি নে। ষাট হাজার সগর-সস্তানের ছাইয়ের পরে এক মুহূর্তে যেন ভাগীরথীর জল এসে স্পর্শ করলে । কত যুগযুগাস্তরের ছাই, রসাতলে পড়ে ছিল—কোনো আগুনের তাপে জলে না, কোনো রসের মিশালে দানা বাধে ন!—সেই ছাই হঠাৎ একেবারে কথা কয়ে উঠল, বললে, এই যে আমি । বইয়ে পড়েছি, গ্রীস দেশের কোন মূর্তিকর দেবতার বরে আপনার মূর্তির মধ্যে প্রাণসঞ্চার করেছিলেন, কিন্তু সেই রূপের থেকে প্রাণের মধ্যে একটা ক্রমশ বিকাশ, একটা সাধনার যোগ আছে ; কিন্তু আমাদের দেশের শ্মশানের ভস্মরাশির মধ্যে সেই রূপের ঐক্য ছিল কোথায় ? সে যদি পাথরের মতো আঁট শক্ত জিনিস হত, তা হলেও তো বুঝতুম—অহল্য পাষাণীও তো একদিন মানুষ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এ যে সব ছড়ানো, এ যে কৃষ্টিকর্তার মুঠোর ফাক দিয়ে কেবলই গলে গলে পড়ে, বাতাসে উড়ে উড়ে যায়, এ যে রাশ হয়ে থাকে, কিছুতে এক হয় না। অথচ সেই জিনিস হঠাৎ একদিন আমাদের ঘরের আঙিনার কাছে এসে মেঘগর্জনে বলে উঠল, स्वग्भश् ८खांः । তাই আমাদের সেদিন মনে হল, এ সমস্তই অলৌকিক । এই বর্তমান মুহূর্ত কোনো স্বধারসোন্মত্ত দেবতার মুকুটের থেকে মানিকের মতো একেবারে আমাদের হাতের উপর খসে পড়ল ; আমাদের অতীতের সঙ্গে আমাদের এই বর্তমানের কোনো স্বাভাবিক পারম্পর্ধ নেই। এ-দিনটি আমাদের সেই ওষুধের মতো যা খুজে বের ৮=২৯