পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8 ૦ রবীন্দ্র-রচনাবলী মিথ্যের দুর্গ শক্ত করে বানাব। তোমাদের অশ্র টিকবে না, কিন্তু আমাদের দুর্গ টিকবে। মাস্টারমশায় আমাকে বললেন, এ-সব তর্ক করবার কথা নয় নিপিল । আমাদের ভিতরেই এবং সকলের মূলেই যে একটি বিরাট সত্য আছে, এ-কথা যে-লোক নিজের ভিতর থেকেই উপলব্ধি না করতে পারে, সে-লোক কেমন করে বিশ্বাস করবে যে সেই অন্তরতম সত্যকেই সমস্ত আবরণ মোচন করে প্রকাশ করাই মানুষের চরম লক্ষ্য, বাইরের জিনিসকে স্ত,পাকার করে তোলা লক্ষ্য নয়। সন্দীপ হেসে উঠে বললে, আপনার এ-কথা মাস্টারমশায়ের মতো কথাই হয়েছে। এ-সব কেবল বইয়ের পাতায় দেখা যায়, চোখের পাতায় দেখছি বাইরের জিনিসকে স্ত,পাকার করে তোলাই মানুষের চরম লক্ষ্য, আর সেই লক্ষ্যকে যারা বড়োরকম করে সাধন করেছে তারা ব্যবসার বিজ্ঞাপনে প্রতিদিন বড়ো অক্ষরে মিথ্য। কথা বলে, তারা রাষ্ট্রনীতির সদর-খাতায় খুব মোট কলমে জাল হিসাব লেখে, তাদের খবরের কাগজ মিথ্যার বোঝাই জাহাজ, আর মাছি যেমন করে সারিপাতিক জরের বীজ বহন করে, তাদের ধর্মপ্রচারকেরা তেমনি করে মিথ্যাকে ছড়িয়ে ছড়িয়ে বেড়ায় । আমি তাদেরই শিষ্য—আমি যখন কনগ্রেসের দলে ছিলুম তখন আমি বাজার বুঝে আধ সের সত্যে সাড়ে-পনেরো সের জল মেশাতে কিছুমাত্র লজ্জা করি নি, আজ আমি সে-দল থেকে বেরিয়ে এসেছি আজও আমি এই ধর্মনীতিকেই সার জেনেছি যে, সত্য মানুষের লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হচ্ছে ফললাভ । মাস্টারমশায় বললেন, সত্যফল লাভ । সন্দীপ বললে, ই সেই ফসল মিথ্যের আবাদে তবে ফলে । পায়ের নিচের মাটি একেবারে চিরে গুড়িয়ে ধুলো করে দিয়ে তবে সেই ফসল ফলে । আর যা সত্য যা আপনি জন্মায় সে হচ্ছে আগাছা, কাটাগাছ, তার থেকেই যার ফলের আশা করে তারা কীটপতঙ্গের দল । এই বলেই সন্দীপ বেগে বেরিয়ে চলে গেল। মাস্টারমশায় একটু হেসে আমার দিকে চেয়ে বললেন, জান নিখিল, সন্দ্বীপ অধামিক নয় ও বিধাৰ্মিক । ও অমাবস্তার চাদ ; চাদই বটে কিন্তু ঘটনাক্রমে পূর্ণিমার উলটে দিকে গিয়ে পড়েছে। আমি বললুম, সেইজন্তে চিরদিনই ওর সঙ্গে আমার মতের মিল নেই কিন্তু ওর প্রতি আমার স্বভাবের আকর্ষণ আছে । ও আমার অনেক ক্ষতি করেছে, আরও করবে, কিন্তু ওকে আমি অশ্রদ্ধা করতে পারি নে। তিনি বললেন, সে আমি ক্রমে বুঝতে পারছি। আমি অনেকদিন আশ্চর্ষ হয়ে