পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে Հ8Գ বিমলা একটু কেসে তার বদ্ধ স্বরকে কিছু পরিষ্কার করে নিয়ে শুধু বললে, ই। আমি বললুম, কী করে কাজটা আরম্ভ করতে হবে তারই প্ল্যানটা একটু স্পষ্ট করে ঠিক করে নেওয়া যাক । বলে আমি আমার পকেট থেকে পেনসিল-কাগজ বের করে নিয়ে বসলুম। কলকাতা থেকে আমাদের দলের যে-সব ছেলে এসে পড়েছে তাদের মধ্যে কী রকম কাজের বিভাগ করে দিতে হবে তারই আলোচনা করতে লাগলুম—এমন সময়ে হঠাৎ মাঝখানে বিমলা বলে উঠল, এখন থাক, সন্দ্বীপবাবু, আমি পাচটার সময় আসব, তখন সব কথা হবে । এই বলেই সে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল । বুঝলুম, এতক্ষণ চেষ্টা করে কিছুতে আমার কথায় বিমলা মন দিতে পারছিল না ; নিজের মনটাকে নিয়ে এখন কিছুক্ষণ ওর একলা থাকা চাই। হয়তো বিছানায় পড়ে ওকে কঁদিতে হবে । বিমলা চলে গেলে ঘরের ভিতরকার হাওয়া যেন আরও বেশি মাতাল হয়ে উঠল। স্বর্য অস্ত যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে তবে যেমন আকাশের মেঘ রঙে রঙে রঙিন হয়ে ওঠে, তেমনি বিমলা চলে যাওয়ার পরে আমার মনটা রঙিয়ে রঙিয়ে উঠতে লাগল। মনে হতে লাগল ঠিক সময়টাকে বয়ে যেতে দিয়েছি। এ কী কাপুরুষতা । আমার এই অদ্ভুত দ্বিধায় বিমল বোধ হয় আমার পরে অবজ্ঞা করেই চলে গেল। করতেও পারে। এই নেশার আবেশে রক্তের মধ্যে যখন ঝিমঝিম করছে এমন সময় বেহার এসে খবর দিলে অমূল্য আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। ক্ষণকালের জন্ত ইচ্ছে হল তাকে এখন বিদায় করে দিই,–কিন্তু মন স্থির করবার পূর্বেই সে ঘরের মধ্যে এসে ঢুকে পড়ল । তার পর মুন-চিনি-কাপড়ের লড়াইয়ের খবর। তখনই ঘরের হাওয়া থেকে নেশা ছুটে গেল। মনে হল স্বপ্ন থেকে জাগলুম। কোমর বেঁধে দাড়ালুম। তার পরে চলে রণক্ষেত্রে । হর হর ব্যোম ব্যোম । খবর এই হাটে কুণ্ডুদের যে-সব প্রজা মাল আনে তারা বশ মেনেছে। নিখিলের পক্ষের আমলার। প্রায় সকলেই গোপনে আমাদের দলে । তারা অস্তরটিপুনি দিচ্ছে। মাড়োয়ারিরা বলছে, আমাদের কাছ থেকে কিছু দও নিয়ে বিলিতি কাপড় বেচতে দিন, নইলে ফতুর হয়ে যাব। মুসলমানেরা কিছুতেই বাগ মানছে না। একটা চাষি তার ছেলেমেয়েদের জন্তে সস্তা দামের জর্মন শাল কিনে নিয়ে যাচ্ছিল, আমাদের দলের এখানকার গ্রামের একজন ছেলে তার সেই শাল-কটা কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই নিয়ে গোলমাল চলছে। আমরা তাকে বলছি তোকে দিশি