পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૯8 রবীন্দ্র-রচনাবলী இ. ত্যাগের রাস্তায় চলে তাদের লোভকে দমন করতেই হয় না, যারা লোভের রাস্তায় চলে পদে পদে তাদের লোভকে ত্যাগ করতে হয়। পঞ্চাশ হাজারকে আমি ত্যাগ করলুম, নিখিলের মাস্টারমশায় চন্দ্রবাবুকে ওটা ত্যাগ করতে হয় না । ছটা যে রিপু আছে তার মধ্যে প্রথম-দুটো এবং শেষ-দুটো হচ্ছে পুরুষের, আর মাঝখানের দুটো হচ্ছে কাপুরুষের। কামনা করব, কিন্তু লোভ থাকবে না, মোহ থাকবে না। তা থাকলেই কামনা হল মাটি। মোহ জিনিসটা থাকে অতীতকে আর ভবিষ্যংকে জড়িয়ে । বর্তমানকে পথ ভোলাবার ওস্তাদ হচ্ছে তারা। এখনই যেটা দরকার সেটাতে যারা মন দিতে পারে নি, যার অন্তকালের বাশি শুনছে, তারা বিরহিণী শকুন্তলার মতো ; কাছের অতিথির ইকে তারা শুনতে পায় না, সেই শাপে দূরের যে-অতিথিকে তারা মুগ্ধ হয়ে কামনা করে তাকে হারায়। যারা কামনার তপস্বী তাদেরই জন্যে মোহমুদগর। কী তব কান্ত", কন্তে পুত্র: । সেদিন আমি বিমলার হাত চেপে ধরেছিলুম, তারই রেশ ওর মনের মধ্যে বাজছে। আমার মনেও তার ঝংকারটা থামে নি। এই রেশটুকুকে তাজা রেখে দিতে হবে । এইটেকেই যদি বার বার অভ্যস্ত করে মোট করে তুলি তাহলে এখন যেটা গানের উপর দিয়ে চলছে তখন সেট। তর্কে এসে না ববে । এখন আমার কোনো কথায় বিমলা "কেন” জিজ্ঞাসা করবার ফাক পায় না । যে-সব মাতুষের মোহ জিনিসটাতে দরকার আছে তাদের বরাদ বন্ধ করে কী হবে । এখন আমার কাজের ভিড়—অতএব এখনকার মতো রসের পেয়ালার এই উপরকার আমেজ পর্যন্তই থাকৃ, তলানি পর্যন্ত গেলে গোলমাল বাধবে । যখন তার ঠিক সময় আসবে তখন তাকে অবজ্ঞা করব না । হে কামী, লোভকে ত্যাগ করো, এবং মোহকে ওস্তাদের হাতের বীণাধন্ত্রের মতো সম্পূর্ণ আয়ত্ত করে তার মিহি তারে মিড় লাগাতে থাকো । এদিকে কাজের আসর আমাদের জমে উঠেছে । আমাদের দলবল ভিতরে ভিতরে ছড়িয়ে গেছে। ভাই-বেরাদর বলে অনেক গল ভেঙে শেষকালে এটা বুঝেছি গায়ে হাত বুলিয়ে কিছুতেই মুসলমানগুলোকে আমাদের দলে আনতে পারব না। ওদের একেবারে নিচে দাবিয়ে দিতে হবে, ওদের জfন চাই জোর আমাদেরই হাতে। আজ ওরা আমাদের ডাক মানে না, দfত বের করে হাউ করে উঠে, একদিন ওদের ভালুক-নাচ নাচাব । নিখিল বলে, ভারতবর্ষ যদি সত্যকার জিনিস হয় তাহলে ওর মধ্যে মুসলমান আছে ।