পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ૨૯ ૯ আমি বলি, তা হতে পারে, কিন্তু কোনখানটাতে আছে তা জানা চাই এবং সেইখানটাতেই জোর করে ওদের বসিয়ে দিতে হবে—নইলে ওরা বিরোধ করবেই। নিখিল বলে, বিরোধ বাড়িয়ে দিয়ে বুঝি তুমি বিরোধ মেটাতে চাও? আমি বলি, তোমার প্ল্যান কী । নিখিল বলে, বিরোধ মেটাবার একটিমাত্র পথ আছে। আমি জানি, সাধুলোকের-লেখা গল্পের মতো নিখিলের সব তর্কই শেষকালে একটা উপদেশে এসে ঠেকবেই। আশ্চর্য এই, এতদিন এই উপদেশ নিয়ে নাড়াচাড়া করছে কিন্তু আজও এগুলোকে ও নিজে ও বিশ্বাস করে । সাথে আমি বলি, নিখিল হচ্ছে একেবারে জন্ম-স্কুল-বয় । গুণের মধ্যে, ও খাটি মাল । চাঁদ সদাগরের মতো ও অবাস্তলের শিবমন্ত্র নিয়েছে, বাস্তবের সাপের দংশনকে ও মরেও মানতে চায় না । মুশকিল এই, এদের কাছে মরাট। শেষ প্রমাণ নয়, ওরা চক্ষু বুজে ঠিক ক’রে রেখেছে তার উপরেও কিছু আছে। অনেকদিন থেকে আমার মনে একটি প্ল্যান আছে ; সেটা যদি খাটাবার সুযোগ পাই তাহলে দেখতে দেখতে সমস্ত দেশে আগুন লেগে যাবে। দেশকে চোখে দেখতে না পেলে আমাদের দেশের লোক জাগবে না । দেশের একটা দেবীপ্রতিম চাই । কথাটা আমার বন্ধুদের মনে লেগেছিল, তারা বললে, আচ্ছ, একটা মূতি বানানে যাক । আমি বললুম, আমরা বানালে চলবে না, যে প্রতিমা চলে আসছে তাকেই আমাদের স্বদেশের প্রতিমা করে তুলতে হবে । পূজার পথ আমাদের দেশে গভীর করে কাট আছে, সেই রাস্তা দিয়েই আমাদের ভক্তির ধারাকে দেশের দিকে টেনে আনতে হবে । এই নিয়ে নিখিলের সঙ্গে কিছুকাল পূর্বে আমার খুব তর্ক হয়ে গেছে । নিখিল বললে, যে-কাজকে সত্য বলে শ্রদ্ধা করি তাকে সাধন করবার জন্তে মোহকে দলে টানা চলবে না। আমি বললুম, মিষ্টান্নমিতরেজনাঃ, মোহ নইলে ইতর লোকের চলেই না ; আর পৃথিবীর বারো-আনা-ভাগ ইতর । সেই মোহকে বাচিয়ে রাখবার জন্তেই সকল দেশে দেবতার স্বষ্টি হয়েছে –মাস্থ্য আপনাকে চেনে । নিখিল বললে, মোহকে ভাঙবার জন্তেই দেবতা ৷ রাখবার জন্তেই অপদেবতা । আচ্ছা বেশ অপদেবতাই সই, সেটাকে নইলে কাজ এগোয় না। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে মোহটা খাড়াই আছে, তাকে সমানে খোরাক দিচ্ছি অথচ তার কাছ থেকে কাজ আদায় করছি নে। এই দেখে না, ব্রাহ্মণকে ভূদেব বলছি, তার পায়ের