পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ«(Ն) রবীন্দ্র-রচনাবলী ধুলো নিচ্ছি, দান-দক্ষিনেরও অস্ত নেই, অথচ এতবড়ো একটা তৈরি জিনিসকে বৃথা নষ্ট হতে দিচ্ছি, কাজে লাগাচ্ছি নে। ওদের ক্ষমতাটা যদি পুরো ওদের হাতে দেওয়া যায়, তাহলে সেই ক্ষমতা দিয়ে যে আমরা আজ অসাধ্য সাধন করতে পারি। কেননা, পৃথিবীতে এক দল জীব আছে তারা পদতলচর, তাদের সংখ্যাই বেশি ; তারা কোনো কাজই করতে পারে না যদি না নিয়মিত পায়ের ধুলো পায়, তা পিঠেই হ’ক আর মাথাতেই হ’ক । এদের খাটাবার জন্যেই মোহ একটা মস্ত শক্তি । সেই শক্তিশেলগুলোকে এতদিন আমাদের অস্ত্রণালায় শান দিয়ে এসেছি, আজ সেটা হানবার দিন এসেছে, আজ কি তাদের সরিয়ে ফেলতে পারি । কিন্তু নিখিলকে এ-সব কথা বোঝানো ভারি শক্ত । সত্য জিনিসটা ওর মনে একটা নিছক প্রেজুডিসের মতে দাড়িয়ে গেছে। যেন সত্য বলে কোনো একটা বিশেষ পদার্থ আছে । আমি ওকে কতবার বলেছি, যেখানে মিথ্যাটা সত্য সেখানে মিথ্যাই সত্য। আমাদের দেশ এই কথাটা বুঝত বলেই অসংকোচে বলতে পেরেছে অজ্ঞানীর পক্ষে মিথ্যাই সত্য । সেই মিথ্যা থেকে ভ্ৰষ্ট হলেই সত্য থেকে সে ভ্রষ্ট হবে । দেশের প্রতিমাকে যে-লোক সত্য বলে মানতে পারে দেশের প্রতিমা তার মধ্যে সত্যের মতোই কাজ করবে। আমাদের যে-রকমের স্বভাব কিংবা সংস্কার তাতে আমরা দেশকে সহজে মানতে পারি নে কিন্তু দেশের প্রতিমাকে অনায়াসে মানতে পারি। এটা যপন জানা কথা, তখন যারা কাজ উদ্ধার করতে চায় তারা এইটে বুঝেই কাজ করবে । নিখিল হঠাৎ ভারি উত্তেজিত হয়ে উঠে বললে, সত্যের সাধন করবার শক্তি তোমরা খুইয়েছ বলেই, তোমরা হঠাৎ আকাশ থেকে একটা মস্ত ফল পেতে চাও । তাই শত শত বৎসর ধরে দেশের যখন সকল কাজই বাকি তখন তোমরা দেশকে দেবতা বানিয়ে বর পাবার জন্তে হাত পেতে বসে রয়েছ । আমি বললুম, অসাধ্য সাধন করা চাই, সেইজন্যেই দেশকে দেবতা করা দরকার। নিখিল বললে, অর্থাং সাধ্যের সাধনায় তোমাদের মন উঠছে না। যা-কিছু আছে সমস্ত এমনিই থাকবে কেবল তার ফলটা হবে আজগুবি । আমি বললুম, নিখিল, তুমি যা বলছ ওগুলো উপদেশ। একটা বিশেষ বয়সে ওর দরকার থাকতে পারে, কিন্তু মানুষের যখন দাত ওঠে তখন ও চলবে না। স্পষ্টই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, কোনোদিন স্বপ্নেও যার আবাদ করি নি সেই ফসল হুহু করে ফলে উঠছে—কিসের জোরে ? আজ দেশকে দেবতা বলে মনের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি বলে। এইটেকেই মূর্তি দিয়ে চিরন্তন করে তোলা এখনকার প্রতিভার