পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ、Qb" 臀 রবীন্দ্র-রচনাবলী দিয়েছেন, ততক্ষণ র্তাকে আমার সমস্ত দেহমন দিয়ে কি বিশ্বাস করতে পেরেছি ? তোমাকে যদি না দেখতুম তাহলে আমার সমস্ত দেশকে আমি এক করে দেখতে পেতুম না, এ-কথা আমি তোমাকে কতবার বলেছি, জানি নে তুমি আমার কথা ঠিক বুঝতে পার কিনা। এ-কথা বোঝানো ভারি শক্ত যে, দেবলোকে দেবতারা থাকেন অদৃশু, মর্ত্যলোকেই তারা দেখা দেন। বিমলা একরকম করে আমার দিকে চেয়ে বললে, তোমার কথা খুব স্পষ্টই বুঝতে পেরেছি। এই প্রথম বিমলা আমাকে “আপনি” না বলে “তুমি” বললে । আমি বললুম, অৰ্জুন যে-কৃষ্ণকে তার সামান্য সারথিরূপে সর্বদা দেখতেন তারও একটি বিরাট রূপ ছিল, সেও একদিন অৰ্জুন দেখেছিলেন ;–তখন তিনি পুরো সত্য দেখেছিলেন। আমার সমস্ত দেশের মধ্যে আমি তোমার সেই বিরাট রূপ দেখেছি । তোমারই গলায় গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সাতনলী হার ; তোমারই কালো চোখের কাজলমাখ পল্লব আমি দেখতে পেয়েছি নদীর নীল জলের বহু দূরপারের বনরেখার মধ্যে ; আর কচি ধানের খেতের উপর দিয়ে তোমার ছায়া-আলোর রঙিন ডুরে-শাড়িটি লুটিয়ে লুটিয়ে যায় ; আর তোমার নিষ্ঠুর তেজ দেখেছি জ্যৈষ্ঠের যে-রৌদ্রে সমস্ত আকাশটা যেন মরুভূমির সিংহের মতো লাল জিব বের করে দিয়ে হা হা করে শ্বসতে থাকে । দেবী যখন তার ভক্তকে এমন আশ্চর্য রকম করে দেখা দিয়েছেন তখন তারই পূজা আমি আমার সমস্ত দেশে প্রচার করব, তবে আমার দেশের লোক জীবন পাবে। “তোমারই মুরতি গড়ি মন্দিরে মন্দিরে।” কিন্তু সে-কথা সকলে স্পষ্ট করে বোঝে নি। তাই আমার সংকল্প, সমস্ত দেশকে ডাক দিয়ে আমার দেবীর মূর্তিটি নিজের হাতে গড়ে এমন করে তার পুজে। দেব যে, কেউ তাকে আর অবিশ্বাস করতে পারবে না। তুমি আমাকে সেই বর দাও, সেই তেজ দাও । مي বিমলার চোখ বুজে এল । সে যে-আসনে বসেছিল সেই আসনের সঙ্গে এক হয়ে গিয়ে যেন পাথরের মূর্তির মতোই স্তব্ধ হয়ে রইল। আমি আর খানিকটা বললেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেত। খানিক পরে সে চোখ মেলে বলে উঠল, ওগো প্রলয়ের পথিক, তুমি পথে বেরিয়েছ, তোমার পথে বাধা দেয় এমন সাধ্য কারও নেই। আমি যে দেখতে পাচ্ছি আজ তোমার ইচ্ছার বেগ কেউ সামলাতে পারবে না। রাজা আসবে তোমার পায়ের কাছে তার রাজদও ফেলে দিতে, ধনী আসবে তার ভাণ্ডার তোমার কাছে উজাড় করে দেবার জন্তে, যাদের আর কিছুই নেই তারাও কেবলমাত্র মরবার জন্তে তোমার কাছে এসে সেধে পড়বে। ভালো-মন্দর