পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬০ 翻 রবীন্দ্র-রচনাবলী এ তো গেল বড়ো কথা । কিন্তু ছোটো কথাও যে পাড়তে হবে। আপাতত অন্তত তিন হাজার টাকা না হলে তো চলবেই না, পাচ হাজার হলেই বেশ স্থডোল ভাবে চলে। কিন্তু এতবড়ো উদ্দীপনার মুখে হঠাৎ এই টাকার কথাটা কি বলা চলে ? কিন্তু আর সময় নেই। ংকোচের বুকে পা দিয়ে দাড়িয়ে বলে ফেললুম, রানী, এদিকে যে ভাণ্ডার শূন্ত হয়ে এল, কাজ বন্ধ হয় বলে । অমনি বিমলার মুখে একটা বেদনার কুঞ্চন দেখা দিল। আমি বুঝলুম, বিমলা ভাবছে, আমি এখনই বুঝি সেই পঞ্চাশ হাজার দাবি করছি। এই নিয়ে ওর বুকের উপর পাথর চেপে রয়েছে—বোধ হয় সারারাত ভেবেছে কিন্তু কোনো কিনারা পায় নি। প্রেমের পূজার আর কোনো উপচার তো হাতে নেই, হৃদয়কে তো স্পষ্ট করে আমার পায়ে ঢেলে দিতে পারছে না, সেইজন্যে ওর মন চাচ্ছে এই মস্ত একটা টাকাকে ওর অবরুদ্ধ আদরের প্রতিরূপ করে আমার কাছে এনে দিতে । কিন্তু কোনো রাস্ত না পেয়ে ওর প্রাণ হাপিয়ে উঠছে । ওর ওই কষ্টটা আমার বুকে লাগছে। ও যে এখন সম্পূর্ণ আমারই ; উপড়ে তোলবার দুঃখ এখন তো আর দরকার নেই, এখন ওকে অনেক যত্নে বঁাচিয়ে রাখতে হবে । আমি বললুম, রানী, এখন সেই পঞ্চাশ হাজারের বিশেষ দরকার নেই, হিসেব করে দেখছি পাচ হাজার, এমন কি তিন হাজার হলেও চলে যাবে । হঠাৎ টানটা কমে গিয়ে বিমলার হৃদয় একেবারে উচ্ছসিত হয়ে উঠল। সে যেন একটা গানের মতো বললে, পাচ হাজার তোমাকে এনে দেব । যে-স্বরে রাধিক গান গেয়েছিল, বঁধুর লাগি কেশে আমি পরব এমন ফুল স্বর্গে মর্ত্যে তিন ভুবনে নাইকো বাহার মূল । বঁশির ধ্বনি হাওয়ায় ভাসে, সবাব কানে বাজবে না সে দেখ, লে চেয়ে.যমুনা ওই ছাপিয়ে গেল কুল। এ ঠিক সেই স্বরই, আর সেই গানই, আর সেই একই কথা—“পাচ হাজার তোমাকে এনে দেব।” “বধুর লাগি কেশে আমি পরব এমন ফুল!” বাশির ভিতরকার ফাকটি সরু বলেই, চারদিকে তার বাধা বলেই, এমন স্বর—অতিলোভের চাপে বাশিটি যদি ভেঙে আজ চ্যাপটা করে দিতুম, তাহলে শোনা যেত,—কেন, এত টাকায় তোমার দরকার কী ? আর আমি মেয়েমানুষ অত টাকা পাবই বা