পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ته په వఅరి আমি বললুম, তাদের অন্যায় জবরদস্তিতে দেশের একজন লোকও যদি হার মানে তাহলে সেটাতে সমস্ত দেশের পরাভব । ইতিহাসে এম. এ. বললে, বুঝতে পারছি নে । আমি বললুম, আমাদের দেশ, দেবতাকে থেকে পেয়াদাকে পর্যস্ত ভয় করে করে আধমরা হয়ে রয়েছে, আজ তোমরা মুক্তির নাম করে সেই জুজুর ভয়কে ফের আরএক নামে যদি দেশে চালাতে চাও, অত্যাচারের দ্বারা কাপুরুষতাটার উপরে যদি তোমাদের দেশের জয়ধ্বজা রোপণ করতে চাও তাহলে দেশকে যারা ভালোবাসে তারা সেই ভয়ের শাসনের কাছে এক চুল মাথা নিচু করবে না। ইতিহাসে এম. এ. বললে, এমন কোন দেশ আছে যেখানে রাজ্যশাসন ভয়ের শাসন নয় ? আমি বললুম, এই ভয়ের শাসনের সীমা কোন পর্যস্ত সেইটের দ্বারাই দেশের মানুষ কতটা স্বাধীন জানা যায়। ভয়ের শাসন যদি চুরিডাকাতি এবং পরের প্রতি অন্যায়ের উপরেই টানা যায় তাহলে বোঝা যায় যে প্রত্যেক মানুষকে অন্ত মাহুষের আক্রমণ থেকে স্বাধীন করবার জন্যেই এই শাসন । কিন্তু মানুষ নিজে কী কাপড় পরবে, কোন দোকান থেকে কিনবে, কী থাবে, কার সঙ্গে বসে খাবে এও যদি ভয়ের শাসনে বাধা হয় তাহলে মানুষের ইচ্ছাকে একেবারে গোড়া ঘেসে অস্বীকার করা হয়। সেটাই হল মানুষকে মচুন্যত্ব থেকে বঞ্চিত করা । ইতিহাসে এম. এ. বললে, অন্ত দেশের সমাজেও কি ইচ্ছাকে গোড়া ঘেঁযে কাটবার কোথাও কোনো ব্যবস্থা নেই ? আমি বললুম, কে বললে নেই ? মাহুষকে নিয়ে দাসব্যবসা যে-দেশে যে-পরিমাণে আছে সে-পরিমাণেই মানুষ আপনাকে নষ্ট করছে । এম. এ. বললে, তাহলে ওই দাসব্যবসাটা মানুষেরই ধর্ম, ওটাই মহষ্যত্ব । বি. এ. বললে, সন্দীপবাবু এ-সম্বন্ধে সেদিন যে-দৃষ্টাস্ত দিলেন সেটা আমাদের মনে খুব লেগেছে। এই যে ওপারে হরিশ কুণ্ডু আছেন জমিদার, কিংবা সানকিভাঙার চক্রবর্তীরা, ওঁদের সমস্ত এলেকা ঝাট দিয়ে আজ এক ছটাক বিলিতি মুন পাবার জো নেই। কেন ? কেন না বরাবরই ওঁরা জোরের উপরে চলেছেন ;—যারা স্বভাবতই দাস, প্ৰভু না থাকাটাই হচ্ছে তাদের সকলের চেয়ে বড়ো বিপদ । এফ, এ, প্লাকৃড, ছোকরাটি বললে, একটা ঘটনা জানি, চক্রবর্তীদের একটি কায়স্থ প্রজা ছিল । সে তার একটা হাট নিয়ে চক্রবর্তীদের কিছুতে মানছিল না। মামলা করতে করতে শেষকালে তার এমন দশা হল যে খেতে পায় না। যখন দুদিন তার