পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳՀ রবীন্দ্র-রচনাবলী দফতরখানার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে কাটিয়েছি। ওই লোহার গরাদের মুঠে থেকে পঞ্চাশ হাজার ছিনিয়ে নেব কী করে ? মনে দয়া ছিল না—যারা পাহারা দিচ্ছে তারা যদি মন্ত্রে ওইখানে মরে পড়ে তাহলে এখনই আমি উন্মত্ত হয়ে ওই ঘরের মধ্যে ছুটে যেতে পারি। এই বাড়ির রানীর মনের মধ্যে ডাকাতের দল খাড়া হাতে নৃত্য করতে করতে দেবীর কাছে বর মাগতে লাগল—কিন্তু বাইরের আকাশ নি:শব হয়ে রইল, প্রহরে প্রহরে পাহারা বদল হতে লাগল, ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজল, বৃহৎ রাজবাড়ি নিৰ্ভয়ে শাস্তিতে ঘুমিয়ে রইল । শেষকালে একদিন অমূল্যকে ডাকলুম। বললুম, দেশের জন্তে টাকার দরকারখাজাঞ্চির কাছ থেকে এ টাকা বের করে আনতে পারবে না ? ' .. ” সে বুক ফুলিয়ে বললে, কেন পারব না ? হায় রে, আমিও সন্দীপের কাছে এমনি করে বলেছিলুম, কেন পারব না ? অমূল্যের বুক-ফোলানো দেখে একটুও আশ্বাস পেলুম না। জিজ্ঞাসা করলুম, কী করবে বল দেখি । অমূল্য এমনি-সব আজগুবি প্ল্যান বলতে লাগল যে, সে মাসিক কাগজের ছোটে। গল্পে ছাড়া আর কোথাও প্রকাশ করবারই যোগ্য নয় । আমি বললুম, না, অমূল্য, ও-সব ছেলেমামুষি রাখে । সে বললে, আচ্ছা, টাকা দিয়ে ওই পাহারার লোকদের বশ করব । টাকা পাবে কোথায় ? সে অম্লানমুখে বললে, বাজার লুঠ করে। আমি বললুম, ও-সব দরকার নেই, আমার গয়না আছে তাই দিয়ে হবে। অমূল্য বললে, কিন্তু খাজাঞ্চির উপর ঘুষ চলবে না। খুব একটা সহজ ফিকির আছে । কী রকম ? সে আপনার শুনে কাজ নেই। সে খুব সহজ । তবু শুনি । অমূল্য কোর্তার পকেট থেকে প্রথমে একটা পকেট-এডিশন গীতা বের করে টেবিলের উপর রাখলে, তার পরে একটি ছোটো পিস্তল বের করে আমাকে দেখালে —আর কিছু বললে না। W. কী সর্বনাশ । আমাদের বুড়ো খাজাঞ্চিকে মারার কথা মনে করতে ওর এক মুহূর্তও দেরি হল না। ওর মুখখানি এমনতরো যে, মনে হয় একটা কাক মারাও ওর