পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ"b" রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি কিছু না বলে তাড়াতাড়ি আমার শোবার ঘরে চলে গেলুম । চোরাবালিতে পা দিয়ে ফেলেছি—আর ওঠবার জো নেই—এখন যত ছটফট করব ততই ডুবতে থাকব । এ টাকাটা এক্ষনি আমার আঁচল থেকে খসিয়ে সন্দীপের হাতে দিয়ে ফেলতে পারলে বাচি, এ বোঝা আমি আর বইতে পারি নে—আমার পজির যেন ভেঙে যাচ্ছে । সকালবেলাতেই খবর পেলুম সন্দীপ আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। আজ আর আমার সাজসজ্জা ছিল না—শাল মুড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে চলে গেলুম। ঘরের মধ্যে ঢুকেই দেখি সন্দীপের সঙ্গে অমূল্য বসে আছে। মনে হল আমার মানসন্ত্রম যা কিছু বাকি ছিল সমস্ত যেন ঝিম ঝিম করে আমার গা বেয়ে নেবে গিয়ে পায়ের তলা দিয়ে একেবারে মাটির মধ্যে চলে গেল। নারীর চরম আমর্যাদ। ওই বালকের সামনে আজ আমাকে উদঘাটিত করে দিতে হবে। আমার এই চুরির কথা এরা আজ দলের মধ্যে বসে আলোচনা করছে ! এর উপরে অল্প একটুখানিও আবরু রাখতে দেয় নি । পুরুষমানুষকে আমরা বুঝব না। ওরা যখন ওদের উদ্দেশ্বের রথ টানবার পথ তৈরি করতে বসে তখন বিশ্বের হৃদয়কে টুকরে টুকরো করে ভেঙে পথের খোয়া বিছিয়ে দিতে ওদের একটুও বাধে না । ওরা নিজের হাতে স্বাক্ট করবার নেশায় যখন মেতে ওঠে তখন স্বষ্টিকর্তার স্বষ্টিকে চুরমার করতেই ওদের আনন্দ । আমার এই মর্মস্তিক লজ্জা ওদের চোথের কোণেও পড়বে না—প্রাণের পরে দরদ নেই ওদের–ওদের যত ব্যগ্রতা সব উদ্দেশুের দিকে । হায় রে, এদের কাছে আমি কেই বা । বন্যার মুখের কাছে একটা মেঠো ফুলের মতো । কিন্তু আমাকে এমন করে নিবিয়ে ফেলে সন্দীপের লাভ হল কী ? এই পাচ হাজার টাকা ? কিন্তু আমার মধ্যে পাচ হাজার টাকার চেয়ে বেশি কিছু ছিল না কি ? ছিল বই কি। সেই খবর তো সন্দ্বীপের কাছেই শুনেছিলুম—আর সেই গুনেই তো আমি সংসারের সমস্তকে তুচ্ছ করতে পেরেছিলুম। আমি আলো দেব, আমি জীবন দেব, আমি শক্তি দেব, আমি অমৃত দেব, সেই বিশ্বাসে সেই আনন্দে দুই কুল ছাপিয়ে আমি বাহির হয়ে পড়েছিলুম। আমার সেই আনন্দকে যদি কেউ পূর্ণ করে তুলত তাহলে আমি মরে গিয়েও বঁচিতুম, আমার সমস্ত সংসার ভাসিয়ে দিয়েও আমার লোকসান হত না । আজ কি এরা বলতে চায় এ সমস্তই মিথ্যে কথা ? অামার মধ্যে যে-দেবী আছে