পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে Ꭶbr☾ আচ্ছ বেশ, অমূল্যর সঙ্গে তোমার বিশেষ কথা শেষ করে নিয়ে তার পরে আমার সঙ্গেও একটু বিশেষ কথা কবার অবসর দিতে হবে কিন্তু, নইলে আমার হার হবে ; আমি সব মানতে পারি হার মানতে পারি নে। আমার ভাগ সকলের ভাগের বেশি । এই নিয়ে চিরজীবন বিধাতার সঙ্গে লড়ছি । বিধাতাকে হারাব, আমি হারব না । তীব্রকটাক্ষে অমূল্যকে আঘাত করে সন্দীপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অমূল্যকে বললুম, লক্ষ্মী ভাই আমার, তোমাকে আমার একটি কাজ করে দিতে হবে । সে বললে, তুমি যা বলবে আমি প্রাণ দিয়ে করব দিদি । শালের ভিতর থেকে গয়নার বাক্স বের করে তার সামনে রেখে বললুম, আমার এই গয়না বন্ধক দিয়ে হ’ক বিক্রি করে হ’ক আমাকে ছ-হাজার টাকা যত শীঘ্র পরি এনে দিতে হবে । অমূল্য ব্যথিত হয়ে বলে উঠল, না দিদি না, গয়না বিক্রি-বন্ধক না, আমি তোমাকে ছ-হাজার টাকা এনে দেব । আমি বিরক্ত হয়ে বললুম, ও-সব কথা রাখো—আমার আর একটুও সময় নেই। এই নিয়ে যাও গয়নার বাক্স—আজ রাত্রের ট্রেনেই কলকাতায় যাও, পরশুর মধ্যে ছ-হাজার টাকা আমাকে এনে দিতে হবে । অমূল্য বাক্সের ভিতর থেকে হীরের চিকটা আলোতে তুলে ধরে আবার বিষন্নমুখে রেখে দিলে। আমি বললুম, এই সব হীরের গয়না ঠিক দামে সহজে বিক্রি হবে না, সেইজন্যে আমি তোমাকে যে গয়না দিচ্ছি এর দাম ত্রিশ হাজারেরও বেশি হবে । এ-সবই যদি যায় সেও ভালো—কিন্তু ছ-হাজার টাকা আমার নিশ্চয়ই চাই । অমূল্য বললে, দেখে দিদি, তোমার কাছ থেকে এই যে ছ-হাজার টাকা নিয়েছেন সন্দীপবাবু, এর জন্তে আমি তার সঙ্গে ঝগড়া করেছি। বলতে পারি নে এ কী লজ্জা ! সন্দীপবাবু বলেন, দেশের জন্তে লজ্জা বিসর্জন করতে হবে । তা হয় তো হবে । কিন্তু এ যেন একটু আলাদা কথা,—দেশের জন্তে মরতে ভয় করি নে, মারতে দয়া করি নে এই শক্তি পেয়েছি, কিন্তু তোমার হাত থেকে এই টাকা নেওয়ার গ্লানি কিছুতে মন থেকে তাড়াতে পারছি নে । এইখানে সন্দীপবাবু আমার চেয়ে অনেক শক্ত—ওঁর একতিলও ক্ষোভ নেই। উনি বলেন টাকা ষার বাক্সে ছিল টাকা যে সত্যি তারই এই মোহটা কাটানো চাই—নইলে বন্দেমাতরং মন্ত্র কিসের। বলতে বলতে অমূল্য উৎসাহিত হয়ে উঠতে লাগল। আমাকে শ্রোতা পেলে ওর