পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&s8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ঢাকা থেকে মৌলবি-প্রচারকের আনাগোনা চলছে । আমাদের এলাকার মুসলমানেরা গোহত্যকে প্রায় হিন্দুর মতোই ঘৃণা করত। কিন্তু দুই-এক জায়গায় গোরু-জবাই দেখা দিল। আমি আমার মুসলমান প্রজারই কাছে তার প্রথম খবর পাই এবং তার প্রতিবাদও শুনি । এবারে বুঝলুম, ঠেকানো শক্ত হবে । ব্যাপারটার মূলে একটা কৃত্রিম জেদ আছে। বাধা দিতে গেলে ক্রমে তাকে আকৃত্রিম করে তোলা হবে । সেইটেই তো আমাদের বিরুদ্ধ-পক্ষের চাল । আমার প্রধান প্রধান হিন্দু প্রজাকে ডাকিয়ে অনেক করে বোঝাবার চেষ্টা করলুম। বললুম, নিজের ধর্ম আমরা রাখতে পারি, পরের ধর্মের উপর আমাদের হাত নেই । আমি বোষ্টম বলে শাক্ত তো রক্তপাত করতে ছাড়ে না। উপায় কী ? মুসলমানকেও নিজের ধর্মমতে চলতে দিতে হবে । তোমরা গোলমাল ক’রে না । তারা বললে, মহারাজ, এতদিন তো এ-সব উপসর্গ ছিল না । আমি বললুম, ছিল না, সে ওদের ইচ্ছা। আবার ইচ্ছা করেই যাতে নিবৃত্ত হয় সেই পথই দেখো । সে তো ঝগড়ার পথ নয় । তারা বললে, না মহারাজ, সেদিন নেই, শাসন না করলে কিছুতেই থামবে না । আমি বললুম, শাসনে গোহিংসা তো থামবেই না, তার উপরে মানুষের প্রতি হিংসা বেড়ে উঠতে থাকবে । এদের মধ্যে একজন ছিল, ইংরেজি-পড়া ; সে এখনকার বুলি আওড়াতে শিখেছে । সে বললে, দেখুন, এটা তো কেবল একটা সংস্কারের কথা নয়, আমাদের দেশ কৃষি প্রধান—এদেশে গোক ধে— আমি বললুম, এদেশে মহিষেও দুধ দেয় মহিষেও চাষ করে, কিন্তু তার কাটামুও মাথায় নিয়ে সর্বাঙ্গে রক্ত মেখে যখন উঠেনিময় নৃত্য করে বেড়াই তখন ধর্মের দোহাই দিয়ে মুসলমানের সঙ্গে ঝগড়া করলে ধর্ম মনে মনে হাসেন, কেবল ঝগড়াটাই প্রবল হয়ে ওঠে। কেবল গোরুই যদি অবধ্য হয় আর মোষ যদি অবধ্য না হয় তবে ওটা ধর্ম নয়, ওটা অন্ধ সংস্কার । ইংরেজি-পড়া বললে, এর পিছনে কে আছে সেটা কি দেখতে পাচ্ছেন না ? মুসলমানরা জানতে পেরেছে তাদের শাস্তি হবে না—পাচুভূেতে কী কাও তারা করেছে শুনেছেন তো ? আমি বললুম, এই যে মুসলমানদের অস্ত্র করে আজ আমাদের উপরে হান সম্ভব হচ্ছে—এই অস্ত্রই যে আমরা নিজের হাতে বানিয়েছি—ধৰ্ম যে এমনি করেই বিচার করেন। আমরা যা এতকাল ধরে জমিয়েছি আমাদের উপরেই তা খরচ হবে ।