পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રિગના রবীন্দ্র-রচনাবলী এসে মনিবের কাছারিতে হাজরি লেখাতে পারে ইনস্পেক্টর তার অনেক দৃষ্টান্ত দেখালেন । আমি জিজ্ঞাসা করলুম, কাসেমকে এনেছেন ? তিনি বললেন, না, সে থানায় আছে—এখনই ডেপুটিবাবু তদস্ত করতে আসবেন। আমি বললুম, আমি তাকে দেখতে চাই । কাসেমের সঙ্গে দেখা হবা মাত্র সে অামার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললে, খোদার কসম, মহারাজ, আমি এ কাজ করি নি । আমি বললুম, কাসেম, আমি তোমাকে সন্দেহ করি নে। ভয় নেই তোমার— বিনা দোষে তোমার শাস্তি ঘটতে দেব না । কাসেম ডাকাতদের ভালো বর্ণনা করতে পারলে না—কেবল খুবই অত্যুক্তি করতে লাগল—চার-শ পাচ-শ লোক, এত-বড়ে-বড়ো বন্দুক-তলোয়ার ইত্যাদি । বুঝলুম এ-সমস্ত বাজে কথা ; হয় ভয়ের দৃষ্টিতে সব বেড়ে উঠেছে, নয় পরাভবের লজ্জা চাপা দেবার জন্যে বাড়িয়ে তুলেছে। ওর ধারণা, হরিশ কুণ্ডুর সঙ্গে আমার শক্রতা, এ তারই কাজ—এমন কি, তাদের একরাম সর্দারের গলার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে বলে তার বিশ্বাস । আমি বললুম, দেখ কাসেম, আন্দাজের উপর ভর করে খবরদার পরের নাম জড়াস নে । হরিশ কুণ্ডু এর মধ্যে আছে কি না সে-কথা বানিয়ে তোলবার ভার তোর উপর নেই । বাড়ি ফিরে এসে মাস্টারমশায়কে ডেকে পাঠালুম। তিনি মাথা নেড়ে বললেন, আর কল্যাণ নেই। ধর্মকে সরিয়ে দিয়ে দেশকে তার জায়গায় বসিয়েছি—এখন দেশের সমস্ত পাপ উদ্ধত হয়ে ফুটে বেরোবে, তার আর কোনো লজ্জা থাকবে না। আপনি কি মনে করেন, এ-কাজ— আমি জানি নে, কিন্তু পাপের হাওয়া উঠেছে। দাও, দাও, তোমার এলেকা থেকে ওদের এখনই বিদায় করে দাও । আর একদিন সময় দিয়েছি—পরশু এর সব যাবে। দেখে, আমি একটি কথা বলি, বিমলাকে তুমি কলকাতায় নিয়ে যাও। এখান থেকে তিনি বাইরেটাকে সংকীর্ণ করে দেখছেন, সব মাহুষের সব জিনিসের ঠিক পরিমাণ বুঝতে পারছেন না। ওঁকে ভূমি একবার পৃথিবীটা দেখিয়ে দাও—মানুষকে, মামুষের কর্মক্ষেত্ৰকে, উনি একবার বড়ো জায়গা থেকে দেখে নিন। আমিও ওই কথাই ভাবছিলুম।