পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

いうes রবীন্দ্র-রচনাবলী আপনি আর-এক সময় আসবেন, আজ সকালে আমি— অমূল্যর জন্তে অপেক্ষা করছেন ? আমি বিরক্ত হয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার উদযোগ করছি এমন সময় সন্দীপ তার শালের ভিতর থেকে আমার গয়নার বাক্স বের করে ঠক করে পাথরের টেবিলের উপর রাখলে । আমি চমকে উঠলুম, বললুম, তাহলে অমূল্য যায় নি ? কোথায় যায় নি ? কলকাতায় ? সন্দীপ একটু হেসে বললে, না। বঁাচলুম। আমার ভাইফোটা বঁাচল । আমি চোর, বিধাতার দণ্ড ওই পর্যন্তই পৌছক-অমূল্য রক্ষা পাক । সন্দীপ আমার মুখের ভাব দেখে বিদ্রুপ করে বললে, এত খুশি, রানী ? গয়নার বাক্সর এত দাম ? তবে কোন প্রাণে এই গয়না দেবীর পূজায় দিতে চেয়েছিলে ? দিয়ে তো ফেলেছ, দেবতার হাত থেকে আবার কি ফিরিয়ে নিতে চাও ? অহংকার মরতে মরতেও ছাড়ে না—ইচ্ছে হল দেখিয়ে দিই এ গয়নার পরে আমার সিকিপয়সার মমতা নেই। আমি বললুম, এ গয়নায় আপনার যদি লোভ থাকে নিয়ে যান না । সন্দীপ বললে, আজ বাংলাদেশে যেখানে যত ধন আছে সমস্তর পরেই আমার লোভ । লোভের মতো এত বড়ো মহৎ বৃত্তি কি আর কিছু আছে ? পৃথিবীর যারা ইন্দ্র, লোভ তাদের ঐরাবত। তাহলে এ সমস্ত গয়না আমার ? এই ব'লে সন্দীপ বাক্সটি তুলে নিয়ে শালের মধ্যে ঢাকা দিতেই অমূল্য ঘরের মধ্যে ঢুকল। তার চোখের গোড়ায় কালি পড়েছে, মুখ শুকনে, উক্ষণুষ্ক চুল—একদিনেই তার তরুণ-বয়সের লাবণ্য যেন ঝরে গিয়েছে । তাকে দেখবামাত্রই আমার বুকের ভিতরটায় কামড়ে উঠল । অমূল্য আমার দিকে না তাকিয়েই একেবারে সন্দ্বীপকে গিয়ে বললে, আপনি গয়নার বাক্স আমার তোরঙ্গ থেকে বের করে এনেছেন ? গয়নার বাক্স তোমারই নাকি ? না, কিন্তু তোরঙ্গ আমার । সন্দীপ হা হা করে হেসে উঠল। বললে,তোরঙ্গ সম্বন্ধে আমি-তুমির ভেদবিচার তো তোমার বড়ো স্বল্প হে অমূল্য। তুমিও মরবার আগে ধর্মপ্রচারক হয়ে মরবে দেখছি।