পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী আবার আস্তে আস্তে অস্তঃপুরে গেলুম। বোধ হয় আর-একবার মেজোরানীর ঘরের দিকে আমার মনটা ছুটল। আমার জীবনও এ-সংসারে কোনো একটা জীবনের বীণায় সত্য এবং স্পষ্ট আঘাত দিয়েছে এটা অনুভব করা আজ আমার যে বড়ো দরকার ;–নিজের অস্তিত্বের পরিচয় তো নিজের মধ্যে পাওয়া যায় না—বাইরে আরকোথাও যে তার খোজ করতে হয় । মেজোরানীর ঘরের সামনে আসতেই তিনি বেরিয়ে এসে বললেন, এই যে ঠাকুরপো, আমি বলি, বুঝি তোমার আজও দেরি হয়। আর দেরি নেই, তোমার খাবার তৈরি রয়েছে এখনই আসছে। 峪 আমি বললুম, ততক্ষণ সেই টাকাটা বের করে ঠিক করে রাখি । আমার শোবার ঘরের দিকে যেতে যেতে মেজোরানী জিজ্ঞাসা করলেন, দারোগা যে এল, সেই চুরির কোনো আশকারা হল না কি। সেই ছ-হাজার টাকা ফিরে পাবার ব্যাপারটা মেজোরানীর কাছে আমার বলতে ইচ্ছে হল না। আমি বললুম, সেই নিয়েই তো চলছে। লোহার সিন্দুকের ঘরে গিয়ে পকেট থেকে চাবির গোছা বের করে দেখি সিন্দুকের চাবিটাই নেই। অদ্ভুত আমার অন্তমনস্কতা ! এই চাবির রিং নিয়ে আজ সকাল থেকে কতবার কত বাক্স খুলেছি আলমারি খুলেছি কিন্তু একবারও লক্ষ্যই করি নি যে, সে-চাবিটা নেই। মেজোরানী বললেন, চাবি কই ? আমি তার জবাব না করে এ-পকেট ও-পকেট নাড়া দিলুম—দশবার করে সমস্ত জিনিসপত্র হাটকে খোজাখুজি করলুম। আমাদের বোঝবার বাকি রইল না যে, চাবি হারায় নি, কেউ একজন রিং থেকে খুলে নিয়েছে। কে নিতে পারে? এ-ঘরে তো— মেজোরানী বললেন, ব্যস্ত হয়ে না, আগে তুমি খেয়ে নাও। আমার বিশ্বাস, তুমি অসাবধান বলেই ছোটোরানী ওই চাবিট। বিশেষ করে তার বাক্সে তুলে রেখেছে। আমার ভারি গোলমাল ঠেকতে লাগল। আমাকে না জানিয়ে বিমল রিং থেকে চাবি বের করে নেবে এ তার স্ব ভাব নয়। আমার খাবার সময় আজ বিমল ছিল না—সে তখন রান্নাঘর থেকে ভাত আনিয়ে অমূল্যকে নিজে বসে খাওয়াচ্ছিল। মেজোরানী তাকে ডাকতে পাঠাচ্ছিলেন—আমি বারণ করলুম। খেয়ে উঠেছি এমন সময় বিমল এল। আমার ইচ্ছা ছিল মেজোরানীর সামনে এই চাবি-হারানোর কথাটার আলোচনা না হয়। কিন্তু সে আর ঘটল না। বিমল