পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OOe রবীন্দ্র-রচনাবলী কান্নার বেগ থেমে গিয়ে উঠে বসতেই, আমি তাকে আমার বুকের কাছে টেনে নেবার চেষ্টা করলুম। সে একটু জোর করে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে হাটু গেড়ে আমার পায়ের উপর বার বার মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে লাগল। আমি পা সরিয়ে নিতেই সে দুই হাত দিয়ে আমার পা জড়িয়ে ধরে গদগদ স্বরে বললে, না না না, তোমার পা সরিয়ে নিয়ে না—আমাকে পূজো করতে দাও । আমি তখন চুপ করে রইলুম। এ পূজায় বাধা দেবার আমি কে ! ষে-পূজা সত্য সে-পূজার দেবতাও সত্য—সে-দেবতা কি আমি যে, আমি সংকোচ করব ? বিমলার আত্মকথা চলো, চলে, এইবার বেরিয়ে পড়ে,—সকল ভালোবাসা যেখানে পূজার সমুদ্রে মিশেছে সেই সাগর-সংগমে । সেই নির্মল নীলের অতলের মধ্যে সমস্ত পঙ্কের ভার মিলিয়ে যাবে। আর আমি ভয় করি নে,—আপনাকেও না, আর-কাউকেও না । আমি আগুনের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে এসেছি—যা পোড়বার তা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যা বাকি আছে তার আর মরণ নেই। সেই-আমি আপনাকে নিবেদন করে দিলুম তার পায়ে যিনি আমার সকল অপরাধকে তার গভীর বেদনার মধ্যে গ্রহণ করেছেন । আজ রাত্রে কলকাতায় যেতে হবে । এতক্ষণ অস্তর-বাহিরের নানা গোলমালে জিনিসপত্র গোছাবার কাজে মন দিতে পারি নি। এইবার বাক্সগুলো টেনে নিয়ে গোছাতে বসলুম। খানিক বাদে দেখি আমার স্বামীও আমার পাশে এসে জুটলেন । আমি বললুম না, ও হবে না,—তুমি যে একটু ঘুমিয়ে নেবে আমাকে কথা দিয়েছ। আমার স্বামী বললেন, আমিই যেন কথা দিয়েছি কিন্তু আমার ঘুম তো কথা দেয় নি—তার যে দেখা নেই । আমি বললুম, না, সে হবে না—তুমি গুতে বাও । তিনি বললেন, তুমি একলা পারবে কেন ? খুব পারব। আমি না হলেও তোমার চলে এ জাক তুমি করতে চাও করে, কিন্তু তুমি না হলে আমার চলে না। তাই একলা-ঘরে কিছুতেই আমার ঘুম এল না। এই বলে তিনি কাজে লেগে গেলেন । এমন সময় বেহার এসে জানালে, সীপবাবু এসেছেন, তিনি খবর দিতে বললেন। g