পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ee : রবীন্দ্র-রচনাবলী যদি আমার পরামর্শ নাও, তুমিও বেশি দেরি করে না। মন্ত্রীরানী, বন্দে প্রলয়রূপিণীং হৃৎপিণ্ডমালিনীং । এই বলে সন্দীপ প্রায় ছুটে চলে গেল। আমি স্তন্ধ হয়ে রইলুম। গিনি আর গয়নাগুলো যে কত তুচ্ছ সে আর-কোনোদিন এমন করে দেখতে পাই নি। কত জিনিস সঙ্গে নেব, কোথায় কী ধরাব, এই কিছু আগে তাই ভাবছিলুম, এখন মনে হল কোনো জিনিসই নেবার দরকার নেই—কেবল বেরিয়ে চলে যাওয়াটাই দরকার । আমার স্বামী চৌকি থেকে উঠে এসে আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে বললেন, আর তো বেশি সময় নেই এখন কাজগুলো সেরে নেওয়া যাক । এমন সময় চন্দ্রনাথবাবু ঘরে ঢুকেই আমাকে দেখে ক্ষণকালের জন্তে সংকুচিত হলেন—বললেন, মাপ ক’রে মা, খবর দিয়ে আসতে পারি নি। নিখিল, মুসলমানের দল খেপে উঠেছে। হরিশ কুণ্ডুর কাছারি লুঠ হয়ে গেছে । সেজন্তে ভয় ছিল না, কিন্তু মেয়েদের উপর তারা যে অত্যাচার আরম্ভ করেছে সে তো প্রাণ থাকতে সহ করা যায় না । 町 আমার স্বামী বললেন, আমি তবে চললুম। আমি তার হাত ধরে বললুম, তুমি গিয়ে কী করতে পারবে ? মাস্টারমশায়, আপনি ওঁকে বারণ করুন । চন্দ্রনাথবাবু বললেন, মা, বারণ করবার তো সময় নেই। আমার স্বামী বললেন, কিছু ভেবো না বিমল । জানলার কাছে গিয়ে দেখলুম, তিনি ঘোড়া ছুটিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। হাতে তার কোনো অস্ত্রও ছিল না । একটু পরেই মেজোরানী ছুটে ঘরের মধ্যে ঢুকেই বললেন, করলি কী, ছুটু, কী সর্বনাশ করলি ? ঠাকুরপোকে যেতে দিলি কেন ?—বেহারাকে বললেন, ডাক্‌ ডাক্‌ শিগগির দেওয়ানবাবুকে ডেকে আন । দেওয়ানবাবুর সামনে মেজোরানী কোনো দিন বেরোন নি। সেদিন তার লজ্জা ছিল না। বললেন, মহারাজকে ফিরিয়ে আনতে শিগগির সওয়ার পাঠাও। দেওয়ানবাবু বললেন, আমরা সকলে মানা করেছি, তিনি ফিয়বেন না । মেজোরানী বললেন, তাকে বলে পাঠাও, মেজোরানীর ওলাউঠে৷ হয়েছে—তার মরণকাল আসন্ন । দেওয়ান চলে গেলে মেজোরানী আমাকে গাল দিতে লাগলেন, রাঙ্গুলী, সর্বনাশী । নিজে মরলি নে, ঠাকুরপোকে মরতে পাঠালি ।