পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ළුHO ) Vলাহিত্যের সামগ্ৰী একেবারে খাটিভাবে নিজের আনন্দের জন্তই লেখা সাহিত্য নহে। অনেকে কবিত্ত্ব করিয়া বলেন যে, পাখি যেমন নিজের উল্পাসেই গান করে, লেখকের রচনার উচ্ছ্বাসও সেইরূপ আত্মগত—পাঠকেরা যেন তাহা অাড়ি পাতিয়া শুনিয়া থাকেন। পাখির গানের মধ্যে পক্ষিসমাজের প্রতি যে কোনো লক্ষ্য নাই, এ-কথা জোর করিয়া বলিতে পারি না । না থাকে তো না-ই রহিল, তাহা লইয়া তর্ক করা বৃথা— কিন্তু লেখকের প্রধান লক্ষ্য পাঠকসমাজ । তা বলিয়াই যে সেটাকে কৃত্রিম বলিতে হইবে, এমন কোনো কথা নাই। মাতার স্তন্ত একমাত্র সস্তানের জন্ত, তাই বলিয়াই তাহাকে স্বতঃস্ফূর্ত বলিবার কোনো বাধা দেখি না । নীরব কবিত্ব এবং আত্মগত ভাবোচ্ছাস, সাহিত্যে এই দুটো বাজে কথা কোনো কোনো মহলে চলিত আছে | যে-কাঠ জলে নাই, তাহাকে আগুন নাম দেওয়াও যেমন, যে-মানুষ আকাশের দিকে তাকাইয়া আকাশেরই মতো নীরব হইয়া থাকে, তাহাকেও কবি বলা সেইরূপ । প্রকাশই কবিত্ত্ব, মনের তলার মধ্যে কী আছে বা না আছে, তাহা আলোচনা করিয়া বাহিরের লোকের কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। কথায় বলে, “মিষ্টান্নমিতরে জনা:”—ভাণ্ডারে কী জমা আছে, তাহা আন্দাজে হিসাব করিয়া বাহিরের লোকের কোনো মুখ নাই, তাহাঙ্গের পক্ষে মিষ্টান্নটা হাতে-হাতে পাওয়া আবশু ক । সাহিত্যে আত্মগত ভাবোচ্ছাসও সেইরকমের একটা কথা। রচনা রচয়িতার নিজের জন্ত নহে, ইহাই ধরিয়া লইতে হইবে—এবং সেইটে ধরিয়া লইয়াই বিচার করিতে হইবে । আমাদের মনের ভাবের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই এই, সে নানা মনের মধ্যে নিজেকে অনুভূত করিতে চায়। প্রকৃতিতে আমরা দেখি, ব্যাপ্ত হইবার জন্য, টিকিয়া থাকিবার জন্ত, প্রাণীদের মধ্যে সর্বদা একটা চেষ্টা চলিতেছে। যে-জীব সস্তানের দ্বারা আপনাকে যত বহুগুণিত করিয়া যত বেশি জায়গা জুড়িতে পারে, তাহার জীবনের অধিকার তত বেশি বাড়িয়া যায়, নিজের অস্তিত্বকে সে যেন তত অধিক সত্য করিয়া তোলে। মাহুষের মনোভাবের মধ্যেও সেইরকমের একটা চেষ্টা আছে। তফাতের মধ্যে