পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●8Wり রবীন্দ্র-রচনাবলী যাহা জ্ঞানের কথা, তাহ প্রচার হইয়া গেলেই তাহার উদ্বেগু সফল হইয়া শেষ হইয়া যায়। মানুষের জ্ঞানসম্বন্ধে নূতন আবিষ্কারের দ্বারা পুরাতন আবিষ্কার আচ্ছন্ন হইয়। যাইতেছে । কাল যাহা পণ্ডিতের অগম্য ছিল, আজ তাহ অর্বাচীন বালকের কাছেও নূতন নহে। যে-সত্য নূতন বেশে বিপ্লব আনয়ন করে, সেই সত্য পুরাতন বেশে বিস্ময়মাত্র উদ্রেক করে না। আজ যে-সকল তত্ত্ব মূঢ়ের নিকটে পরিচিত, কোনোকালে যে তাহা পণ্ডিতের নিকটেও বিস্তর বাধা প্রাপ্ত হইয়াছিল, ইহাই লোকের কাছে আশ্চর্য বলিয়া মনে হয় । কিন্তু হৃদয়ভাবের কথা, প্রচারের দ্বারা পুরাতন হয় না। জ্ঞানের কথা একবার জানিলে আর জানিতে হয় না ; আগুন গরম, সূর্য গোল, জল তরল, ইহা একবার জানিলেই চুকিয়া যায়, দ্বিতীয়বার কেহ যদি তাহা আমাদের নূতন শিক্ষার মতো জানাইতে আসে, তবে ধৈর্য রক্ষা করা কঠিন হয় । কিন্তু ভাবের কথা বারবার অনুভব করিয়া শ্রাস্তিবোধ হয় না। সূর্য যে পূর্বদিকে ওঠে, এ-কথা আর আমাদের মন আকর্ষণ করে না—কিন্তু স্বর্যোদয়ের যে সৌন্দর্য ও আনন, তাহা জীবস্বষ্টির পর হইতে আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে অম্লান আছে। এমন কি, অমুভূতি যত প্রাচীন কাল হইতে যত লোকপরম্পরার উপর দিয়া প্রবাহিত হইয়া আসে, ততই তাহার গভীরতা বৃদ্ধি হয়, ততই তাহা আমাদিগকে সহজে আবিষ্ট করিতে পারে। অতএব চিরকাল যদি মানুষ আপনার কোনো জিনিস মানুষের কাছে উজ্জল নবীনভাবে অমর করিয়া রাখিতে চায়, তবে তাহাকে ভাবের কথাই আশ্রয় করিতে হয় । এইজন্ত সাহিত্যের প্রধান অবলম্বন জ্ঞানের বিষয় নহে, ভাবের বিষয় । তাহা ছাড়া যাহা জ্ঞানের জিনিস, তাহা এক ভাষা হইতে আর-এক ভাষায় স্থানান্তর করা চলে। মূল রচনা হইতে তাহাকে উদ্ধার করিয়া অন্য রচনার মধ্যে নিবিষ্ট করিলে অনেক সময় তাহার উজ্জ্বলতাবৃদ্ধি হয়। তাহার বিষয়টি লইয়া নানা লোকে নানা ভাষায় নানা রকম করিয়া প্রচার করিতে পারে—এইরূপেই তাহার উদ্দেশু যথার্থভাবে সফল হইয়া থাকে । কিন্তু ভাবের বিষয়সম্বন্ধে এ-কথা খাটে না। তাহা যে মূর্তিকে আশ্রয় করে, তাহ হইতে আর বিচ্ছিন্ন হইতে পারে না । জ্ঞানের কথাকে প্রমাণ করিতে হয়, আর তাবের কথাকে সঞ্চার করিয়া দিতে হয় । তাহার জন্ত নানাপ্রকার জাভাস-ইঙ্গিত, নানাপ্রকার ছলাকলার দরকার হয় । তাহাকে কেবল বুঝাইয়া বলিলেই হয় না, তাহাকে স্বষ্টি কবিয়া তুলিতে হয়। এই কলাকৌশলপূর্ণ রচনা, ভাবের দেহের মতো। এই দেহের মধ্যে ভাবের