পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য O&6. সৌন্দর্যবোধ প্রথম-বয়সে ব্রহ্মচর্ষপালন করিয়া নিয়মে-সংযমে জীবনকে গড়িয়া তুলিতে হইবে। ভারতবর্ষের এই প্রাচীন উপদেশের কথা তুলিতে গেলে অনেকের মনে এই তর্ক উঠিবে, এ যে বড়ো কঠোর সাধনা । ইহার দ্বারা না হয় খুব একটা শক্ত মানুষ তৈরি করিয়া তুলিলে, না হয় বাসনার দড়িদড় ছিড়িয়া মস্ত একজন সাধুপুরুষ হইয়। উঠিলে, কিন্তু এ-সাধনায় রসের স্থান কোথায় ? কোথায় গেল সাহিত্য, চিত্র, সংগীত ? মানুষকে যদি পুরা করিয়া তুলিতে হয়, তবে সৌন্দর্যচর্চাকে ফাকি দেওয়া চলে না। এ তো ঠিক কথা । সৌন্দর্য তো চাই। আত্মহত্যা তো সাধনার বিষয় হইতে পারে না, আত্মার বিকাশই সাধনার লক্ষ্য । বস্তুত শিক্ষাকালে ব্ৰহ্মচর্যপালন শুষ্কতার সাধন নয়। ক্ষেত্রকে মরুভূমি করিয়া তুলিবার জন্য চাষা খাটিয়া মরে না। চাষা যখন লাঙল দিয়া মাটি বিদীর্ণ করে, মই দিয়া ঢেলা দলিয়া গুড়া করিতে থাকে, নিড়ানি দিয়া সমস্ত ঘাস ও গুল্ম উপড়াইয়া ক্ষেত্রটাকে একেবারে শূন্ত করিয়া ফেলে, তখন আনাড়ি লোকের মনে হইতে পারে, জমিটার উপর উৎপীড়ন চলিতেছে। কিন্তু এমনি করিয়াই ফল ফলাইতে হয়। তেমনি যথার্থভাবে রসগ্রহণের অধিকারী হইতে গেলে গোড়ায় কঠিন চাষেরই দরকার। রসের পথেই পথ ভুলাইবার অনেক উপসর্গ আছে। সে-পথে সমস্ত বিপদ এড়াইয়া পূর্ণতালাভ করিতে ধে চায়, নিয়ম-সংযম তাহারই বেশি আবগুক। রসের জন্যই এই নীরসতা স্বীকার করিয়া जहेप्ड इम्न । মানুষের দুর্ভাগ্য এই যে, উপলক্ষ্যের দ্বারা লক্ষ্য প্রায়ই চাপা পড়ে ; সে গান শিখিতে চায়, ওস্তাদি শিখিয়া বসে ; ধনী হইতে চায়, টাকা জমাইয়া কৃপাপাত্র হইয়া ওঠে ; দেশের হিত চায়, কমিটিতে রেজোলুসেন পাস করিয়াই নিজেকে কৃতার্থ মনে করে । তেমনি নিয়ম-সংযমটাই চরম লক্ষ্যের সমস্ত জায়গা জুড়িয়া বসিয়া আছে, এ আমরা প্রায়ই দেখিতে পাই। নিয়মটাকেই যাহারা লাভ ষাহারা পুণ্য মনে করে, তাহারা নিয়মের লোভে একেবারে লুব্ধ হইয় উঠে। নিয়মলোলুপতা ষড়রিপুর জায়গায় সপ্তম রিপু হইয়া দেখা দেয়। এটা মাহষের জড়ত্বের একটা লক্ষণ। সঞ্চয় করিতে শুরু করিলে মানুষ আর শামতে চায় না। বিলাতের কথা শুনিতে পাই, সেখানে কত লোক পাগলের মতো