পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য Vථ6:H মহিষীকে দেখিতে পাইবে। উতঙ্ক অস্তঃপুরে গেলেন, কিন্তু মহিষীকে দেখিতে পাইলেন না। অশুচি হইয়া কেহ সতীকে দেখিতে পাইত না—উতঙ্ক তখন অশুচি ছিলেন। বিশ্বের সমস্ত সৌন্দর্ধের সমস্ত মহিমার অস্তঃপুরে যে সতীলক্ষ্মী বিরাজ করিতেছেন, তিনিও আমাদের সম্মুখেই আছেন, কিন্তু গুচি ন হইলে দেখিতে পাইব না। যখন বিলাসে হাবুডুবু খাই, ভোগের নেশায় মাতিয়া বেড়াই, তখন বিশ্বজগতের আলোকবসনা সতীলক্ষ্মী আমাদের দৃষ্টি হইতে অন্তধান করেন। এ-কথা ধর্মনীতিপ্রচারের দিক হইতে বলিতেছি না ; আনন্দের দিক হইতে, যাহাকে ইংরেজিতে আর্ট বলে, তাহারই তরফ হইতে বলিতেছি । আমাদের শাস্ত্রেও বলে, কেবল ধর্মের জন্ত নয়, স্বথের জন্তও সংযত হইবে । “স্বখার্থী সংঘতো ভবেৎ।” অর্থাৎ ইচ্ছার যদি চরিতার্থতা চাও, তবে ইচ্ছাকে শাসনে রাখো—যদি সৌন্দর্যভোগ করিতে চাও, তৰে ভোগলালসাকে দমন করিয়া শুচি হুইয়া শাস্ত হও। প্রবৃত্তিকে যদি দমন করিতে না জানি,তবে প্রবৃত্তিরই চরিতার্থতাকে আমরা সৌন্দর্যবোধের চরিতার্থতা বলিয়া ভুল করি—স্বাহা চিত্তের জিনিস, তাহাকে দুই হাতে করিয়া দলিয়া মনে করি, যেন তাহাকে পাইলাম। এইজগুই বলিয়াছি, সৌন্দর্যবোধ ঠিকমতো উদ্বোধনের জন্ত ব্ৰহ্মচর্যের সাধনই আবগুক । যাহাদের চোখে ধুলা দেওয়া শক্ত, তাহার। হঠাৎ সন্দিগ্ধ হইয়া বলিয়া উঠিবেন, এ যে একেবারে কবিত্ব আসিয়া পড়িল । তাহারা বলিবেন, সংসারে তো আমরা প্রায়ই দেখিতে পাই, যে-সকল কলাকুশল গুণী সৌন্দর্যস্থষ্টি করিয়া আসিয়াছেন, তাহারা অনেকেই সংযমের দৃষ্টান্ত রাখিয়া যান নাই। তাহাদের জীবনচরিতটা পাঠ্য নহে। অতএব কবিত্ব রাখিয়া এই বাস্তব সত্যটার আলোচনা করা দরকার । আমার বক্তব্য এই যে, বাস্তবকে আমরা এত বেশি বিশ্বাস করি কেন ? কারণ, সে প্রত্যক্ষগোচর। কিন্তু অনেকস্থলেই মানুষের সম্বন্ধে আমরা যাহাকে বাস্তব বলি, তাহার বেশির ভাগই আমাদের অপ্রত্যক্ষ। একটুখানি দেখিতে পাই বলিয়া মনে করি সবটাই যেন দেখিতে পাইলাম, এইজন্য মানুষঘটিত বাস্তববৃত্তান্ত লইয়া একজন যাহাকে সাদা বলে, আর-একজন তাহাকে মেটে বলিলেও বাচিতাম, তাহাকে একেবারে কালো বলিয়া বসে । নেপোপিয়নকে কেহ বলে দেবতা, কেহ বলে দানব । আকবরকে কেহ বলে উদার প্রজাহিতৈষী, কেহ বলে তাহার হিন্দুপ্রজার পক্ষে তিনিই যত নষ্টের গোড়া। কেহ বলেন বর্ণভেদেই জামাদের হিন্দুসমাজ রক্ষা করিয়াছে,