পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য CXo জীবনে আমরা যে-কোনো স্থায়ী বড়ো জিনিস গড়িয়া তুলি, তাহ আমাদের অস্তরের ধর্মবুদ্ধির সাহায্যেই ঘটে, স্ৰষ্টতার সাহায্যে নহে। গুণী ব্যক্তিরাও যেখানে তাহাদের কলারচনা স্থাপন করিয়াছেন, সেখানে তাহাদের চরিত্রই দেখাইয়াছেন ; যেখানে তাহাদের জীবনকে নষ্ট করিয়াছেন, সেখানে চরিত্রের অভাব প্রকাশ পাইয়াছে। সেখানে, তাহাদের মনের ভিতরে ধর্মের যে একটি স্বনার আদর্শ আছে, রিপুর টানে তাহার বিরুদ্ধে গিয়া পীড়িত হইয়াছেন। গড়িয়া তুলিতে সংযম দরকার হয়, নষ্ট করিতে অসংযম। ধারণা করিতে সংযম চাই, আর মিথ্যা বুঝিতেই অসংযম । এখানে কথা উঠিবে, তবেই তো একই মাহুষের মধ্যে সৌন্দর্ধবিকাশের ক্ষমতা ও চরিত্রের অসংযম একত্রই থাকিতে থাকিতে পাকিতে পারে ; তবে তো দেখি, বাঘেগোরুতে এক ঘাটেই জল খায়। বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খায় না বটে, কিন্তু সে কখন ? যখন বাঘও পূর্ণত পাইয়া উঠিয়াছে, গোরুও পূর্ণ গোরু হইয়াছে। শিশু-অবস্থায় উভয়ে একসঙ্গে খেলা করিতে পারে—বড়ো হইলে ৰাঘও বাপ দিয়া পড়ে, গোরুও দৌড় দিতে চেষ্টা করে । তেমনি সৌন্দর্যবোধের যথার্থ পরিণতভাব কখনোই প্রবৃত্তির বিক্ষোভ চিত্তের অসংযমের সঙ্গে এক ক্ষেত্রে টিকিতে পারে না। পরস্পর পরস্পরের বিরোধী । যদি বল কেন বিরোধী, তাহার কারণ আছে। বিশ্বামিত্র বিধাতার সঙ্গে আড়াআড়ি করিয়া একটা জগৎ স্বষ্টি করিয়াছিলেন । সেটা তাহার ক্রোধের স্বষ্টি, দম্ভের স্বষ্টি,—সুতরাং সেই জগং বিধাতার জগতের সঙ্গে মিশ খাইল না, তাহাকে স্পধা করিয়া আঘাত করিতে লাগিল— খাপছাড়া স্বষ্টিছাড়া হইয়া রহিল, চরাচরের সঙ্গে স্থর মিলাইতে পারিল না—অবশেষে পীড়া দিয়া পীড়া পাইয়া সেটা মরিল। আমাদের প্রবৃত্তি উগ্র হইয়া উঠিলে বিধাতার জগতের বিরুদ্ধে নিজে যেন স্মৃষ্টি করিতে থাকে । তখন চারিদিকের সঙ্গে তাহার আর মিল খায় না। আমাদের ক্রোধ, আমাদের লোভ নিজের চারিদিকে এমন সকল বিকার উৎপাদন করে, যাহাতে ছোটোই বড়ো হইয় উঠে, বড়োই ছোটে হইয়া যায়, যাহা ক্ষণকালের তাহাকেই চিরকালের বলিয়া মনে হয়, যাহা চিরকালের তাহা চোখেই পড়ে না। যাহার প্রতি আমাদের লোভ জন্মে তাহাকে আমরা এমনি অসত্য করিয়া গড়িয়া তুলি যে, জগতের ԵաՅՎ9