পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭২ রবীন্দ্র-রচনাবলী যে-কোনো ঘাটেই মানুষের হৃদয় আসিয়া ঠেকিতেছে, সেইখানেই সে ভাষা দিয়া একটা স্থায়ী তীর্থ বাধাইয়া দিবার চেষ্টা করিতেছে—এমনি করিয়া বিশ্বতটের সকল স্থানকেই সে মানবযাত্রীর হৃদয়ের পক্ষে ব্যবহারযোগ্য উত্তরণযোগ্য করিয়া তুলিতেছে। এমনি করিয়া মানুষ জলে-স্থলে-আকাশে, শরতে-বসন্তে-বর্ষায়, ধর্মে-কর্মে-ইতিহাসে অপরূপ চিহ্ন কাটিয়া-কাটিয়া সত্যের মুনীর মূর্তির প্রতি মাহুষের হৃদয়কে নিয়ত আহবান করিতেছে। দেশে-দেশে কালে-কালে এই চিহ্ন, এই আহবান কেবলই বিস্তৃত হইয়া চলিতেছে। জগতে সর্বত্রই মানুষ সাহিত্যের দ্বারা হৃদয়ের এই চিহ্নগুলি যদি না কাটিত, তবে জগৎ আমাদের কাছে আজ কত সংকীর্ণ হইয়া থাকিত তাহা আমরা কল্পনাই করিতে পারি না। আজ এই চোখে-দেখা কানে-শোনা জগৎ যে বছলপরিমাণে আমাদের হৃদয়ের জগৎ হইয়া উঠিয়াছে, ইহার প্রধান কারণ মানুষের সাহিত্য হৃদয়ের আবিষ্কারচিহ্নে জগৎকে মণ্ডিত করিয়া তুলিয়াছে। সত্য যে পদার্থপুঞ্জের স্থিতি ও গতির সামঞ্জস্ত, সত্য যে কাৰ্য্যকারণ পরম্পর, সে কথা জানাইবার অন্ত শাস্ত্র আছে—কিন্তু সাহিত্য জানাইতেছে, সত্যই আনন্দ, সত্যই অমৃত । সাহিত্য উপনিষদের এই মন্ত্রকে অহরহ ব্যাখ্যা করিয়া চলিয়াছে, রসে ৰৈ স: রসং হেবায়ং লঙ্ক নিশাভৰতি। তিনিই রস : এই রসকে পাইয়াই মানুষ আনন্দিত হয় । >○>\○ বিশ্বসাহিত্য আমাদের অস্তঃকরণে যত-কিছু বৃত্তি আছে, সে কেবল সকলের সঙ্গে যোগস্থাপনের জন্ত । এই যোগের দ্বারাই আমরা সত্য হই, সত্যকে পাই । নহিলে আমি আছি বা কিছু আছে, ইহার অর্থই থাকে না । জগতে সত্যের সঙ্গে আমাদের এই যে যোগ, ইহা তিন প্রকারের। বুদ্ধির যোগ, প্রয়োজনের যোগ, আর আনন্দের যোগ । ইহার মধ্যে বুদ্ধির যোগকে একপ্রকার প্রতিযোগিতা বলা যাইতে পারে। সে যেন ব্যাধের সঙ্গে শিকারের যোগ। সত্যকে