পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\e<}ve রবীজ-রচনাবলী অসভ্য। এইজন্ত সভ্যসমাজে রাজ্যে আঘাত লাগিলে সেই রাজ্যের প্রত্যেক লোকের বৃহৎ কলেবরটাতে জাঘাত লাগে ; সমাজ কোনোদিকে সংকীর্ণ হইলে সেই সমাজের প্রত্যেক লোকের আত্মৰিকাশ আচ্ছন্ন হইতে থাকে । মাহুষের সংসারক্ষেত্রের এই সমস্ত রচনা ষে-পরিমাণে উদার হয়, সেই পরিমাণে সে আপনার মন্থন্মত্বকে অবাধে প্রকাশ করিতে পারে । ষে-পরিমাণে সেখানে সংকোচ আছে, প্রকাশের অভাবে মানুষ সেই পরিমাণে সেখানে দীন হইয়া থাকে ; কারণ, সংসার কাজের উপলক্ষ্য করিয়া মানুষকে প্রকাশেরই জন্ত এবং প্রকাশই একমাত্র আনন্দ । কিন্তু কৰ্মক্ষেত্রে মানুষ এই যে আপনাকেই প্রকাশ করে, এখানে প্রকাশ করাটাই তাহার আসল লক্ষ্য নয়—ওটা কেবল গৌণফল। গৃহিণী ঘরের কাজের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করেন বটে, কিন্তু প্রকাশ করাটাই তাহার মনের স্পষ্ট উদ্দেশ্য নয় । গৃহকর্ষের ভিতর দিয়া তিনি তাহার নানা অভিপ্রায় সাধন করেন ; সেই সকল অভিপ্রায় কাজের উপর হইতে ঠিকরাইয়া আসিয়া তাহার প্রকৃতিকে আমাদের কাছে বাহির করিয়া দেয় । কিন্তু সময় আছে, যখন মাহুষ মুখ্যতই আপনাকে প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করে। মনে করে, যেদিন ঘরে বিবাহ, সেদিন একদিকে বিবাহের কাজটা সারিবার জঙ্গ আয়োজন চলিতে থাকে, আবার অঙ্গদিকে শুধু কাজ সারা নহে, হৃদয়কে জানাইয়া দিবারও প্রয়োজন ঘটে ; সেদিন ঘরের লোক ঘরের মঙ্গলকে ও আনন্দকে সকলের কাছে ঘোষণা না করিয়া দিয়া থাকিতে পারে না । ঘোষণার উপায় কী ? বাশি বাজে, দীপ জলে, ফুলপাতার মালা দিয়া ঘর সাজানো হয়। মুন্দর ধ্বনি স্বন্দর গন্ধ সুন্দর দৃশ্বের দ্বারা উজ্জ্বলতার দ্বারা হৃদয় আপনাকে শতধারায় ফোয়ারার মতো চারিদিকে ছড়াইয়া ফেলিতে থাকে। এমনি করিয়া নানাপ্রকার ইঙ্গিতে আপনার আনন্দকে সে অন্তের মধ্যে জাগাইয়া তুলিয়৷ সেই আনন্দকে সকলের মধ্যে সত্য করিতে চায় । মা তাহার কোলের শিশুর সেবা না করিয়া থাকিতে পারেন না। কিন্তু শুধু তাই নয়, কেবল কাজ করিয়া নয়, মায়ের ক্ষেহ জাপনা-আপনি বিনা কারণে আপনাকে বাহিরে ব্যক্ত করিতে চায় । তখন সে কত খেলায় কত অাদরে কত ভাষায় ভিতর হইতে ছাপাইয়া উঠিতে থাকে। তখন সে শিশুকে নানা রঙের সাজে সাজাইয়া নানা গহনা পরাইয়া নিতান্তই বিনা প্রয়োজনে নিজের প্রাচুর্যকে প্রাচুর্বদ্বারা মাধুর্বকে সৌন্দর্বদ্বারা বাহিরে বিস্তার না করিয়া থাকিতে পারে না। * ইহা হইতে এই বুঝা যাইতেছে যে, আমাদের হৃদয়ের ধর্মই এই । সে আপনার