পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

€\ూు রবীজ-রচনাবলী আমাদের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিতেছে এবং আমাদের হৃদয়ের রসকে বাহিরে টানিয়া আনিতেছে। এই মিলনের মধ্যে লুকোচুরি যতই থাক, বাধাবিঘ্ন যতই ঘটুক, তৰু প্রকাশ ছাড়া এবং মিলন ছাড়া ইহার মধ্যে আর কিছুই খুজিয়া পাওয়া যায় না । তবেই দেখিতেছি, জগৎসংসারে ও মানব-সংসারে একটা সাদৃশু আছে। ঈশ্বরের সত্যরূপ-জ্ঞানরূপ জগতের নানা কাজে প্রকাশ পাইতেছে, আর র্তাহার আনন্দরূপ জগতের নানা রসে প্রত্যক্ষ হইতেছে । কাজের মধ্যে র্তাহার জ্ঞানকে আয়ত্ত করা শক্ত—রসের মধ্যে র্তাহার আনন্দকে অনুভব করায় জটিলতা নাই। কারণ, রসের মধ্যে তিনি যে নিজেকে প্রকাশই করিতেছেন। মাহুষের সংসারেও আমাদের জ্ঞানশক্তি কাজ করিতেছে, আমাদের আনন্দশক্তি রসের স্বষ্টি করিয়া চলিতেছে। কাজের মধ্যে আমাদের আত্মরক্ষার শক্তি, আর রসের মধ্যে আমাদের আত্মপ্রকাশের শক্তি। আত্মরক্ষ। আমাদের পক্ষে প্রয়োজনীয়, আর আত্মপ্রকাশ আমাদের প্রয়োজনের বেশি । প্রয়োজনে প্রকাশকে এবং প্রকাশে প্রয়োজনকে বাধা দেয়, যুদ্ধের উদাহরণে তাহা দেখাইয়াছি। স্বাৰ্থ বাজে খরচ করিতে চায় না, অথচ বাজে খরচেই আনন্ম আত্মপরিচয় দেয়। এইজন্যই স্বার্থের ক্ষেত্রে আপিসে আমাদের আত্মপ্রকাশ যতই অল্প হয়, ততই তাহা শ্রদ্ধেয় হইয়া থাকে, এবং এইজন্যই আনন্দের উৎসৰে স্বার্থকে যতই বিশ্বত হইতে দেখি, উৎসব ততই উজ্জল হইতে থাকে। তাই সাহিত্যে মানুষের আত্মপ্রকাশে কোনো বাধা নাই । স্বার্থ সেখান হইতে দূরে। দুঃখ সেখানে আমাদের হৃদয়ের উপর চোখের জলের বাষ্প স্বজন করে কিন্তু আমাদের সংসারের উপর হস্তক্ষেপ করে না ; ভয় আমাদের হৃদয়কে দোলা দিতে থাকে, কিন্তু আমাদের শরীরকে আঘাত করে না ; স্থখ আমাদের হৃদয়ে পুলকম্পর্শ সঞ্চার করে, কিন্তু আমাদের লোভকে নাড়া দিয়া অত্যন্ত জাগাইয়া তোলে না। এইরূপে মানুষ আপনার প্রয়োজনের সংসারের ঠিক পাশে-পাশেই একটা প্রয়োজনছাড়া সাহিত্যের সংসার রচনা করিয়া চলিয়াছে। সেখানে সে নিজের বাস্তব কোনো ক্ষতি না করিয়া নানা রসের দ্বারা আপনার প্রকৃতিকে নানারূপে অঙ্কুম্ভৰ করিবার আনন্দ পায়,—আপনার প্রকাশকে বাধাহীন করিয়া দেখে। সেখানে দায় নাই, সেখানে খুশি । সেখানে পেয়াদী-বরকন্দাজ নাই, সেখানে স্বয়ং মহারাজা । এইজন্ত সাহিত্যে আমরা কিসের পরিচয় পাই ? না, মাহুষের বাহা প্রাচুর্য, বাহা ঐশ্বৰ্ষ, যাহা তাহার সমস্ত প্রয়োজনকে ছাপাইয়া উঠিয়াছে । যাহা তাহার সংসারের মধ্যেই ফুরাইয়া যাইতে পারে নাই। 刺