পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ebr8 রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রকাশটি তুচ্ছ নয়, মানব-হৃদয় যাহাকে করুশায় বা বীর্ষে, রুদ্রতায় বা শান্তিতে আপনার উপযুক্ত প্রতিনিধি বলিয়া স্বীকার করিতে কুষ্ঠিত না হয়, যাহা কলানৈপুণ্যের বেষ্টনীর মধ্যে দাড়াইয়া নিত্যকালের অনিমেষ দৃষ্টিপাত মাথা তুলিয়া সহ করিতে পারে, স্বভাবতই মানুষ তাহাকেই সাহিত্যে স্থান দেয় ; নহিলে তাহার অসংগতি আমাদের কাছে পীড়াজনক হইয়া উঠে। রাজা ছাড়া আর কাহাকেও সিংহাসনের উপর দেখিলে আমাদের মনে বিদ্রোহ উপস্থিত হয় । কিন্তু সকল মানুষের বিচারবুদ্ধি বড়ো নয়, সকল সমাজও বড়ে নয়, এবং । এক-একটা সময় আসে, যখন ক্ষণিক ও ক্ষুদ্র মোহে মানুষকে ছোটো করিয়া দেয়। তখন সেই দুঃসময়ের বিকৃত দর্পণে ছোটো জিনিস বড়ো হইয়া দেখা দেয় এবং তখনকার সাহিত্যে মানুষ আপনার ছোটোকেই বড়ো করিয়া তোলে, আপনার কলঙ্কের উপরেই স্পর্ধার সঙ্গে আলো ফেলে। তখন কলার বদলে কৌশল, গৌরবের জায়গায় গর্ব এবং টেনিসনের আসনে কিল্লিঙের আবির্ভাব হয় । কিন্তু মহাকাল বসিয়া আছেন। তিনি তো সমস্তই ছাকিয়া লইবেন । তাহার চালুনির মধ্য দিয়া যাহা ছোটো, যাহা জীর্ণ, তাহা গলিয়া ধুলায় পড়িয়া ধুলা হইয়া যায়। নানা কাল ও নানা লোকের হাতে সেই সকল জিনিসই টেকে, যাহার মধ্যে সকল মানুষই আপনাকে দেখিতে পায়। এমনি করিয়া বাছাই হইয়া যাহা থাকিয়া যায়, তাহা মানুষের সর্বদেশের সর্বকালের ধন। এমনি করিয়া ভাঙিয়া গড়িয়া সাহিত্যের মধ্যে মামুষের প্রকৃতির মানুষের প্রকাশের একটি নিত্যকালীন আদর্শ আপনি সঞ্চিত হইয়া উঠিতেছে। সেই আদর্শই নূতন যুগের সাহিত্যেরও হাল ধরিয়া থাকে। সেই আদৰ্শমতোই যদি আমরা সাহিত্যের বিচার করি, তবে সমগ্র মানবের বিচারবুদ্ধির সাহায্য লওয়া হয়। এইবার আমার আসল কথাটি বলিবার সময় উপস্থিত হইয়াছে ; সেটি এই— সাহিত্যকে দেশকালপাত্রে ছোটো করিয়া দেখিলে ঠিকমতো দেখাই হয় না। আমরা যদি এইটে বুঝি যে, সাহিত্যে বিশ্বমানবই আপনাকে প্রকাশ করিতেছে, তবে সাহিত্যের মধ্যে আমাদের বাহা দেখিবার তাহা দেখিতে পাইব । যেখানে সাহিত্যরচনায় লেখক উপলক্ষ্যমাত্র না হইয়াছে, সেখানে তাহার লেখা নষ্ট হইয়া গেছে। যেখানে লেখক নিজের ভাবনায় সমগ্র মানুষের ভাৰ অনুভব করিয়াছে, নিজের লেখায় সমগ্ৰ মাজুষের বেদন প্রকাশ করিয়াছে, সেইখানেই তাহার লেখা সাহিত্যে জায়গা পাইয়াছে। তবেই সাহিত্যকে এইভাৰে দেখিতে হইবে যে, বিশ্বমানব রাজমিস্ত্রি হইয়া এই মন্দিরটি গড়িয়া তুলিতেছেন ; লেখকেরা নানা দেশ ও নানা