পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

С3 е রবীন্দ্র-রচনাবলী যুরোপের সাহিত্যে, সৌন্দর্যের দোহাই দিয়া, যাহ-কিছু প্রচলিত, যাহা-কিছু প্রাকৃত তাহাকে তুচ্ছ, তাহাকে humdrum বলিয়া একেবারে বাটাইয়া দিবার চেষ্টা কোনো কোনো জায়গায় দেখা যায়। আমার বেশ মনে আছে—অনেকদিন হইল, কোনো বড়ো লেখকের লেখা একখানি ফরাসি বহির ইংরেজি তর্জমা পড়িয়াছিলাম। সে বইখানি নামজাদা । কবি স্বইনবরন তাহাকে Gospel of Beauty অর্থাৎ সৌন্দর্যের ধর্মশাস্ত্র উপাধি দিয়াছেন। তাহাতে এখুদকে একজন পুরুষ ও আর-একদিকে একজন স্ত্রীলোক আপনার সম্পূর্ণ মনের মতনকে পৃথিবীর সমস্ত নরনারীর মধ্যে খুজিয়া বেড়ানোকেই জীবনের ব্রত করিয়াছে। সংসারের যাহকিছু প্রতিদিনের, যাহা-কিছু চারিদিকের, যাহা-কিছু সাধারণ, তাহা হইতে কোনোমতে আপনাকে বাচাইয়া, অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রার সামান্ততাকে পদে পদে অপমান করিয়া সমস্ত বইখানির মধ্যে আশ্চর্য লিপিচাতুর্যের সহিত রঙের পর রং স্বরের পর সুর চড়াইয়। সৌন্দর্যের একটি অতিদুর্লভ উৎকর্ষের প্রাত একটি অতিতীব্র ঔৎস্থক্য প্রকাশ করা হইয়াছে। আমার তো মনে হয়, এমন নিষ্ঠুর বই আমি পড়ি নাই। আমার কেবলই মনে হইতেছিল, সৌন্দর্যের টান মানুষের মনকে যদি সংসার হইতে এমনি করিয়া ছিনিয়া লয়, মানুষের বাসনাকে তাহার চারিদিকের সহিত যদি কোনোমতেই খাপ খাইতে না দেয়, যাহা প্রচলিত তাহাকে অকিঞ্চিৎকর বলিয়া প্রচার করে, যাহা হিতকর তাহাকে গ্রাম্য বলিয়া পরিহাস করিতে থাকে, তবে সৌন্দর্যে ধিক থাক । এ যেন আঙুরকে দলিয়া তাহার সমস্ত কাস্তি ও রসগন্ধ বাদ দিয়া কেবলমাত্র তাহার মদটুকুকেই চোলাইয়া লওয়া । ங் সৌন্দর্য জাত মানিয়া চলে না—সে সকলের সঙ্গেই মিশিয়া আছে। সে আমাদের ক্ষণকালের মাঝখানেই চিরস্তনকে, আমাদের সামাস্তের মুখত্ৰতেই চিরবিস্ময়কে উজ্জল করিয়া দেখাইয়া দেয়। সমস্ত জগতের যেটি মূলস্থর, সৌন্দর্য সেটি আমাদের মনের মধ্যে ধরাইয়া দেয়—সমস্ত সত্যকে তাহার সাহায্যে নিবিড় করিয়া দেখিতে পাই । একদিন ফান্ধনমাসের দিনশেষে অতি সামান্ত ষে একটা গ্রামের পথ দিয়া চলিয়াছিলাম, বিকশিত সরষের থেত হইতে গন্ধ আসিয়া সেই বাকা রাস্তা, সেই পুকুরের পাড়, সেই ঝিকিমিকি বিকালবেলাটিকে আমার হৃদয়ের মধ্যে চিরদিনের করিয়া দিয়াছে । যাহাকে চাহিয়া দেখিতাম না তাহাকে বিশেষ করিয়া দেখাইয়াছে, যাহাকে জুলিতাম তাহাকে ভুলিতে দেয় নাই। সৌন্দর্যে আমরা যেটিকে দেখি কেবল সেইটিকেই দেখি এমন নয়, তাহার যোগে আর-সমস্তকেই দেখি ; মধুর গান সমস্ত জল-স্থলআকাশকে, অস্তিত্বমাত্রকেই মর্যাদা দান করে। যাহারা সাহিত্যুবীর, তাহারাও