পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\లిసిశి রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাদের সম্মুখে দৌড় করাইতেছেন। ইহার প্রলোভনে আমরা অসাবধান হইলেই জীবনের সারবনটি চুরি যায়। রক্ষণ করে । ঈশ্বর পরীক্ষক এবং সংসার পরীক্ষণস্থল, এই সমস্ত মিথ্যা বিভীষিকার কথা আর সহ হয় না। আমাদের নকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঈশ্বরের খাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা করিয়ো না। সে-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নাই এবং পরীক্ষার কোনো প্রয়োজনই নাই। সে-বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র শিক্ষাই আছে। সেখানে কেবল বিকাশেরই ব্যাপার চলিতেছে। সেইজন্তই মানুষের মনে সৌন্দর্যবোধ যে এমন প্রবল হইয়াছে, সে আমাদের বিকাশ ঘটাইবে বলিয়াই । বিপদ থাকে তো থাক, তাই বলিয়া বিকাশের পথকে একবারে পরিত্যাগ করিয়া চলিলে মঙ্গল নাই। বিকাশ বলিতে কী বুঝায়, সে-কথা পূর্বেই বলিয়াছি। সমগ্রের সঙ্গে প্রত্যেকের যোগ যতরকম করিয়া যতদূর ব্যাপ্ত হইতে থাকে, ততই প্রত্যেকের বিকাশ। স্বৰ্গরাজ ইন্দ্র যদি আমাদের সেই যোগসাধনের বিঘ্ন ঘটাইবার জন্তই সৌন্দর্যকে মর্ত্যে পাঠাইয়া দেন, ইহা সত্য হয়, তবে ইন্দ্রদেবের সেই প্রবঞ্চনাকে দূর হইতে নমস্কার করিয়া দুই চক্ষু মুদিয়া থাকাই শ্রেয়, এ-কথা স্বীকার করিতেই হইবে। কিন্তু ইন্দ্রদেবের প্রতি আমার লেশমাত্র অবিশ্বাস নাই। তাহার কোনো দূতকেই মারিয়া খেদাইতে হইবে, এমন কথা আমি বলিতে পারিব না। এ-কথা নিশ্চয়ই জানি, সত্যের সঙ্গে আমাদের হৃদয়ের প্রগাঢ় এবং অখণ্ড মিলন ঘটাইবার জন্যই সৌন্দর্যবোধ হাসিমুখে আমাদের হৃদয়ে অবতীর্ণ হইয়াছে। সে কেবল বিনপ্রয়োজনের মিলন, সে কেবলমাত্র আনন্দের মিলন । নীলাকাশ যখন নিতান্তই শুধু শুধু আমাদের হৃদয় দখল করিয়া সমস্ত শুামল পৃথিবীর উপর তাহার জ্যোতির্ময় পীতাম্বরটি ছড়াইয়া দেয়, তখনই আমরা বলি, স্বন্দর। বসন্তে গাছের নূতন কচিপাত বনলক্ষ্মীদের আঙুলগুলির মতো যখন একেবারেই বিনা আবশ্বকে আমাদের দুই চোখকে ইঙ্গিত করিয়া ডাকিতে থাকে, তখনই আমাদের মনে সৌন্দর্যরস উছলিয়া উঠে । কিন্তু সৌন্দর্যবোধ কেবল স্বন্দরনামক সত্যের একটা অংশের দিকেই আমাদের হৃদয়কে টানে ও বাকি অংশ হইতে আমাদের হৃদয়কে ফিরাইয়া দেয়, তাহার এই অন্যায় বদনাম কেমন করিয়া ঘুচানো যাইবে, সেই কথাই ভাবিতেছি। আমাদের জ্ঞানশক্তিই কি জগতের সমস্ত সত্যকেই এখনই আমাদের জানার মধ্যে আনিয়াছে ? আমাদের কর্মশক্তিই কি জগতের সমভ শক্তিকে আজই আমাদের ব্যবহারের আয়ত্ত করিয়াছে ? জগতের এক অংশ আমাদের জানা, অধিকাংশই