পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जांश्ङिT 8e o ইহা হইতে বুঝা যাইবে যে, প্রথমে নানাযুখে প্রচলিত থওগানগুলা একটা কাব্যে বাধা পড়িয়া সেই কাব্য আবার যখন বহুকাল ধরিয়া সর্বসাধারণের কাছে গাওয়া হইতে থাকে, তখন আবার তাহার উপরে নানা দিক হইতে নানা কালের হাত পড়িতে থাকে। সেই কাব্য দেশের সকল দিক হইতেই আপনার পুষ্টি আপনি টানিয়া লয়। এমনি করিয়া ক্রমশই তাহ সমস্ত দেশের জিনিস হইয়া উঠে। তাহাতে সমস্ত দেশের অস্তঃকরণের ইতিহাস, তত্ত্বজ্ঞান, ধর্মবোধ, কর্মনীতি আপনি আসিয়া মিলিত হয়। যে-কবি গোড়ায় ইহার ভিত পত্তন করিয়াছেন, তাহার আশ্চর্ষ ক্ষমতাবলেই ইহা সম্ভবপর হইতে পারে। তিনি এমন জায়গায় এমন করিয়া গোড়া ফাদিয়াছেন, তাহার প্ল্যানটা এতই প্রশস্ত যে, বহুকাল ধরিয়া সমস্ত দেশকে তিনি নিজের কাজে খাটাইয়া লইতে পারেন। এতদিন ধরিয়া এত লোকের হাত পড়িয়া কোথাও ষে কিছুই তেড়াবাকা হয় না, তাহা বলিতে পারি না—কিন্তু মূল গঠনটার মাহাঝ্যে সে-সমস্তই অভিভূত হইয়া থাকে। আমাদের রামায়ণ-মহাভারত, বিশেষভাবে মহাভারত, ইহার দৃষ্টাস্তস্থল। এইরূপ কালে কালে একটি সমগ্রজাতি যে-কাব্যকে একজন কবির কবিত্ত্বভিত্তি আশ্রয় করিয়া রচনা করিয়া তুলিয়াছে, তাহাকেই যথার্থ মহাকাব্য বলা যায়। তাহাকে আমি গঙ্গা ব্ৰহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীর সঙ্গে তুলনা করি। প্রথমে পর্বতের নানা গোপন গুহা হইতে নানা ঝরনা একটা জায়গায় আসিয়া মোট নদী তৈরি করিয়া তোলে। তার পরে সে যখন আপনার পথে চলিতে থাকে, তখন নানা দেশ হইতে নানা উপনদী তাহার সঙ্গে মিলিয়া তাহার মধ্যে আপনাকে হারাইয়া ফেলে । কিন্তু ভারতবর্ষের গঙ্গা, মিশরের নীল ও চীনের ইয়াংসিকিয়াং প্রভৃতির মতো মহানদী জগতে অল্পই আছে। এই সমস্ত নদী মাতার মতো একটি বৃহৎ দেশের এক প্রাস্ত হইতে আর-এক প্রাস্তকে পালন করিয়া চলিয়াছে। ইহার এক-একটি প্রাচীন সভ্যতার স্তন্তদায়িনী ধাত্রীর মতো । তেমনি মহাকাব্যও আমাদের জানা সাহিত্যের মধ্যে কেবল চারিটিমাত্র অাছে। ইলিয়ড, অডেসি, রামায়ণ ও মহাভারত। অলংকারশাস্ত্রের কৃত্রিম আইনের জোরেই রঘুবংশ, ভারবি, মাঘ, বা মিলটনের প্যারাডাইস লসট, ভলটেয়ারের ইরিয়াড প্রভৃতিকে মহাকাব্যের পঙক্তিতে জোর করিয়া বসানো হইয়া থাকে। তাহার পরে এখনকার ছাপাখানার শাসনে মহাকাব্য গড়িয়া উঠিবার সম্ভাবনা পর্বস্ত লোপ হইয়া গেছে।