পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S२ রবীন্দ্র-রচনাবলী ভাবটি ধরা দিয়াছে। ভগবান ষে শাস্ত্রজ্ঞানহীন অনাচারী বানরদেরও বন্ধু, কাঠবিড়ালির অতি সামান্ত সেবাও যে তাহার কাছে অগ্রাহ হয় না, পাপিষ্ঠ রাক্ষসকেও ষে তিনি যথোচিত শাস্তির দ্বারা পরাভূত করিয়া উদ্ধার করেন, এই ভাবটিই কৃত্তিৰাসে প্রবল হইয়া ভারতবর্ষে রামায়ণকথার ধারাকে গঙ্গার শাখা ভাগীরথীর স্কায় আয়ু-একটা বিশেষ পথে লইয়া গেছে। রামায়ণকথার যে-ধারা আমরা অনুসরণ করিয়া আসিয়াছি, তাহারই একটি অভ্যস্ত আধুনিক শাখা মেঘনাদবধকাব্যের মধ্যে রহিয়াছে। এই কাব্য সেই পুরাতন কথা অবলম্বন করিয়াও বাল্মীকি ও কৃত্তিবাস হইতে একটি বিপরীত প্রকৃতি १द्विश्वांग्छ् । আমরা অনেক সময়ে বলিয়া থাকি যে, ইংরেজি শিখিয়া যে-সাহিত্য আমরা রচনা করিতেছি, তাহা খাটি জিনিস নহে—অতএব এ-সাহিত্য যেন দেশের সাহিত্য বলিয়াই গণ্য হইবার যোগ্য নয়। যে-জিনিসটা একটা-কোনো স্থায়ী বিশেষত্ব লাভ করিয়াছে, যাহার আর কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নাই, তাহাকেই যদি খাটি জিনিস বলা হয়, তবে সজীব প্রকৃতির মধ্যে সে-জিনিসটা কোথাও নাই । মাহুষের সমাজে ভাবের সঙ্গে ভাবের মিলন হয় এবং সে-মিলনে নূতন নূতন বৈচিত্র্যের স্থষ্টি হইতে থাকে। ভারতবর্ষে এমন মিলন কত ঘটিয়াছে, আমাদের এমন কত পরিবর্তনের মধ্য দিয়া আসিয়াছে, তাহার কি সীমা আছে । অল্পদিন হইল মুসলমানেরা যখন আমাদের দেশের রাজসিংহাসনে চড়িয়া বসিয়াছিল, তাহারা কি আমাদের মনকে স্পর্শ করে নাই ? তাহাদের সেমেটিক-ভাবের সঙ্গে হিন্দুভাবের কোনো স্বাভাবিক সংমিশ্রণ কি ঘটিতে পায় নাই ? আমাদের শিল্পসাহিত্য বেশভূষা রাগরাগিণী ধৰ্মকর্মের মধ্যে মুসলমানের সামগ্ৰী মিশিয়াছে। মনের সঙ্গে মনের এ-মিলন না হইয়া থাকিতে পারে না। যদি এমন হয় যে, কেবল আমাদেরই মধ্যে এরূপ হওয়া সম্ভব নহে, তরে সে আমাদের পক্ষে নিতাস্ত লজ্জার কথা । যুরোপ হইতে একটা ভাবের প্রবাহ আসিয়াছে এবং স্বভাবতই তাহা আমাদের মনকে আঘাত করিতেছে। এইরূপ ঘাত-প্রতিঘাতে আমাদের চিত্ত জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছে, সে-কথা অস্বীকার করিলে নিজের চিত্তবৃত্তির প্রতি অন্তায় অপবাদ দেওয়া হইৰে । এইরূপ ভাবের মিলনে যে একটা ব্যাপার উৎপন্ন হইয়া উঠিতেছে, কিছুকাল পরে তাহার মূর্তিটা স্পষ্ট করিয়া দেখিতে পাইবার সময় জালিৰে। যুরোপ হইতে নূতন ভাবের সংঘাত আমাদের হৃদয়কে চেভাইয়া তুলিয়াছে,