পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য 8>Q বাংলা জাতীয় সাহিত্য বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎসভার বার্ষিক অধিবেশনে পঠিত সহিত শৰ হইতে সাহিত্য শব্দের উৎপত্তি। অতএব ধাতুগত অর্থ ধরিলে সাহিত্য শব্দের মধ্যে একটি মিলনের ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। সে যে কেবল ভাবে-ভাবে ভাষায়-ভাষায় গ্রন্থে-গ্রন্থে মিলন তাহা নহে,—মামুষের সহিত মামুষের, অতীতের সহিত বর্তমানের, দূরের সহিত নিকটের অত্যন্ত অন্তরঙ্গ যোগসাধন সাহিত্য ব্যতীত আর কিছুর দ্বারাই সম্ভবপর নহে। যে-দেশে সাহিত্যের অভাব সে-দেশের লোক পরম্পর সজীবন্ধনে সংযুক্ত নহে—তাহারা বিচ্ছিন্ন। পূর্বপুরুষদের সহিতও তাহাদের জীবন্ত যোগ নাই। কেবল পূর্বাপরপ্রচলিত জড়প্রথাবন্ধনের দ্বারা যে যোগসাধন হয় তাহা যোগ নহে তাহা বন্ধন মাত্র । সাহিত্যের ধারাবাহিকতা ব্যতীত পূর্বপুরুষদিগের সহিত সচেতন মানসিক যোগ কখনো রক্ষিত হইতে পারে না। আমাদের দেশের প্রাচীন কালের সহিত আধুনিক কালের যদিও প্রথাগত বন্ধন আছে কিন্তু এক জায়গায় কোথায় আমাদের মনের মধ্যে এমন একটা নাড়ির বিচ্ছেদ ঘটিয়াছে যে, সেকাল হইতে মানসিক প্রাণরস অব্যাহতভাবে প্রবাহিত হইয়া একাল পর্যন্ত আসিয়া পৌছিতেছে না। আমাদের পূর্বপুরুষেরা কেমন করিয়া চিন্তা করিতেন, কার্য করিতেন, নব তত্ত্ব উচ্ভাবন করিতেন; সমস্ত শ্রুতি স্থতি পুরাণ কাব্যকলা বর্মতত্ব রাজনীতি সমাজতন্ত্রের মর্মস্থলে তাহাদের জীবৎশক্তি র্তাহাদের চিৎশক্তি জাগ্রত থাকিয়া কী ভাবে সমস্তকে সর্বদা স্বজন এবং সংযমন করিত, কী ভাবে সমাজ প্রতিদিন বৃদ্ধিলাভ করিত পরিবর্তনপ্রাপ্ত হইত, আপনাকে কেমন করিয়া চতুর্দিকে বিস্তার করিত, নূতন অবস্থাকে কেমন করিয়া আপনার সহিত সম্মিলিত করিত তাহা আমরা সম্যকৃরূপে জানি না। মহাভারতের কাল এবং আমাদের বর্তমান কালের মাঝখানকার অপরিসীম বিচ্ছেদকে জামরা পূরণ করিব কী দিয়া ? যখন ভুবনেশ্বর ও কনারক মন্দিরের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দেখিয়া বিস্ময়ে অভিভূত হওয়া যায়, তখন মনে হয় এই আশ্চর্ষ শিল্পকৌশলগুলি কি বাহিরের কোনো আকস্মিক আন্দোলনে কতকগুলি প্রস্তরময় বুদবুদের মতে হঠাৎ জাগিয়া উঠিয়াছিল ? সেই শিল্পীদের সহিত আমাদের ৰোগ কোম্‌খানে ? যাহারা এত অনুরাগ এত ধৈর্ঘ এত নৈপুণ্যের সহিত