পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՏԵ- রবীন্দ্র-রচনাবলী পারে না। আমাদের দেশে কিসে অনেক লোক এক হয় ? ধর্মে। সেইজন্য আমাদের দেশে কেবল ধর্মসাহিত্যই আছে । সেইজন্য প্রাচীন বঙ্গসাহিত্য কেবল শাক্ত এবং বৈষ্ণব কাব্যেরই সমষ্টি । রাজপুতগণকে বীরগৌরবে এক করিত, এই জন্ত বীরগৌরব তাহাদের কবিদের গানের বিষয় ছিল । আমাদের ক্ষুদ্র বঙ্গদেশেও একটা সাধারণ সাহিত্যের হাওয়া উঠিয়াছে। ধর্মপ্রচার হইতেই ইহার আরম্ভ। প্রথমে যাহারা ইংরেজি শিখিতেন তাহারা প্রধানত আমাদের বণিক ইংরেজ-রাজের নিকট উন্নতিলাভের প্রত্যাশাতেই এ-কার্যে প্রবৃত্ত হইতেন ; র্তাহাদের অর্থকরী বিদ্যা সাধারণের কোনো কাজে লাগিত না । তখন সর্বসাধারণকে এক শিক্ষায় গঠিত করিবার সংকল্প কাহারও মাথায় উঠে নাই ; তখন কৃতী-পুরুষগণ ষে যাহার আপন আপন পন্থা দেখিত। বাংলার সর্বসাধারণকে আপনাদের কথা শুনাইবার অভাব খ্ৰীষ্টীয় মিশনরিগণ সর্বপ্রথমে অনুভব করেন—এইজন্ত র্তাহারা সর্বসাধারণের ভাষাকে শিক্ষাবহনের ও জ্ঞানবিতরণের যোগ্য করিয়া তুলিতে প্রবৃত্ত হইলেন। কিন্তু এ-কার্য বিদেশীয়ের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে সম্ভবপর নহে। নব্যবঙ্গের প্রথম স্বষ্টিকর্তা রাজা রামমোহন রায়ই প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে গদ্যসাহিত্যের ভূমিপত্তন করিয়া দেন । ইতিপূর্বে আমাদের সাহিত্য কেবল পদ্যেই বদ্ধ ছিল। কিন্তু রামমোহন রায়ের উদ্ধেশুসাধনের পক্ষে পদ্য যথেষ্ট ছিল না। কেবল ভাবের ভাষা, সৌন্দর্ষের ভাষা, রসজ্ঞের ভাষা নহে ; যুক্তির ভাষা, বিবৃতির ভাষা, সর্ববিষয়ের এবং সর্বসাধারণের ভাষা র্তাহার আবশ্যক ছিল। পূর্বে কেবল ভাবুকসভার জন্ত পদ্য ছিল এখন জনসভার জন্ত গদ্য অবতীর্ণ হইল। এই গদ্যপদ্যর সহযোগব্যতীত কখনো কোনো সাহিত্য সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হইতে পারে না। খাসদরবার এবং আমদরবার ব্যতীত সাহিত্যের রাজদরবার সরস্বতী মহারানীর সমস্ত প্রজাসাধারণের উপযোগী হয় না। রামমোহন রায় আসিয়া সরস্বতীর সেই আমদরবারের সিংহদ্বার স্বহস্তে উদঘাটিত করিয়া দিলেন । আমরা আশৈশবকাল গদ্য বলিয়া আসিতেছি কিন্তু গদ্য যে কী দুরূহ ব্যাপার, তাহা আমাদের প্রথম গদ্যকারদের রচনা দেখিলেই বুঝা যায়। পদ্যে প্রত্যেক ছত্রের প্রান্তে একটি করিয়া বিশ্রামের স্থান আছে, প্রত্যেক দুই ছত্র বা চারি ছত্রের পর একটা করিয়া নিয়মিত ভাবের ছেদ পাওয়া যায় ; কিন্তু গদ্যে একটা পদের সহিত আর-একটা পদকে বাধিয়া দিতে হয়, মাঝে ফাক রাখিবার জো নাই ; পদের মধ্যে