পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ミや রবীন্দ্র-রচনাবলী গেলেই তাহা দুটাে কথায় শেষ হইয়া যায় এবং তাহার নূতনত্বের উজ্জ্বলতাও দেখিতে পাওয়া যায় না ; যেমন স্বপ্নে অনেক ব্যাপারকে অপরিসীম বিস্ময়জনক এবং বৃহৎ মনে হয় কিন্তু জাগরণমাত্রেই তাহা তুচ্ছ এবং ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে তেমনি পরের শিক্ষাকে যতক্ষণ নিজের ডাঙায় না টানিয়া তোলা যায় ততক্ষণ আমরা বুঝিতেই পারি না বাস্তবিক কতখানি আমরা পাইয়াছি। আমাদের অধিকাংশ বিদ্যাই বড়শিগাথা মাছের মতো ইংরেজি ভাষার সুগভীর সরোবরের মধ্যে খেলাইয়া বেড়াইতেছে, আন্দাজে তাহার গুরুত্ব নির্ণয় করিয়া খুব পুলকিত গর্বিত হইয়া উঠিয়াছি। যদি বঙ্গভাষার কুলে একবার টানিয়া তুলিতে পারিতাম তাহা হইলে সম্ভবত নিজের বিদ্যাটাকে তত বেশি বড়ে না দেখাইতেও পারিত ; নাই দেখাক, তবু সেটা ভোগে লাগিত এবং আয়তনে ছোটো হইলেও আমাদের কল্যাণরূপিণী গৃহলক্ষ্মীর স্বহুস্তকৃত রন্ধনে, অমিশ্র অনুরাগ এবং বিশুদ্ধ সর্ষপতৈল সহযোগে পরম উপাদেয় হইতে পারিত। বাইবেলে কথিত আছে, যাহার নিজের কিছু আছে তাহাকেই দেওয়া হইয়া থাকে। যে-লোক একেবারে রিক্ত তাহার পক্ষে কিছু গ্রহণ করা বড়ো কঠিন । জলাশয়েই বৃষ্টির জল বাধিয়া থাকে, শুষ্ক মরুভূমে তাহা দাড়াইবে কোথায় ? আমরা নূতন বিদ্যাকে গ্রহণ করিব সঞ্চিত করিব কোনখানে ? যদি নিজের শুষ্ক স্বার্থ এবং ক্ষণিক আবশ্বক ও ভোগের মধ্যে সে প্রতিক্ষণে শোষিত হইয়া যায় তবে সে-শিক্ষা কেমন করিয়া ক্রমশ স্থায়িত্ব ও গভীরতা লাভ করিবে, সরস্বতীর সৌন্দর্যশতদলে প্রফুল্প হইয়া উঠিবে, আপনার তটভূমিকে স্নিগ্ধ শুামল, আকাশকে প্রতিফলিত, বহুকাল ও বহুলোককে আনন্দে ও নির্মলতায় অভিষিক্ত করিয়া তুলিবে ? বঙ্গসাহিত্যের পক্ষে আরও একটি কথা বলিবার আছে। আলোচনা ব্যতীত কোনো শিক্ষা সজীবভাবে আপনার হয় না। নানা মানবমনের মধ্য দিয়া গড়াইয়া না আসিলে একট। শিক্ষার বিষয় মানবসাধারণের যথার্থ ব্যবহারযোগ্য হইয় উঠে না । যে-দেশে বিজ্ঞানশাস্ত্রের আলোচনা বহুকাল হইতে প্রচলিত আছে সে-দেশে বিজ্ঞান অস্তরে বাহিরে আচারে ব্যবহারে ভাষায় ভাবে সর্বত্র সংলিপ্ত হইয়া গেছে। সে-দেশে বিজ্ঞান একটা অপরিচিত শুষ্ক জ্ঞান নহে, তাহ মানবমনের সহিত মানবজীবনের সহিত সজীবতাবে নানা আকারে মিশ্রিত হইয়া আছে। এইজন্স সে-দেশে অতি সহজেই বিজ্ঞানের অনুরাগ অকৃত্রিম হয়, বিজ্ঞানের ধারণা গভীরতর হইয়া থাকে । নানা মনের মধ্যে অবিশ্রাম সঞ্চরিত হইয়া সেখানে বিজ্ঞান প্রাণ পাইয়া উঠে। যেদেশে সাহিত্যচর্চা প্রাচীন ও পরিব্যাপ্ত সে-দেশে সাহিত্য কেবল গুটিকতক লোকের শখের মধ্যে বদ্ধ নহে। তাহ সমাজের নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সহিত প্রবাহিত, তাহ দিনে