পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8७३ রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু আপনাকে বড়ো মনে করা সকলের চেয়ে সহজ। সমযোগ্য লোককে দূরে পরিহার করিয়া অনেকে স্বকপোলকল্পিত মহত্ত্বলাভ করে, কিন্তু প্রার্থনা করি, এরূপ অজ্ঞানকৃত প্রহসন অভিনয় হইতে আমাদের অন্তর্ষামী আমাদিগকে সতত বিরত করুন । 赠鬣 বহুকাল হইতে বহুতর সামাজিক প্লাবনের সাহায্যে স্তর পড়িয়া ইংরেজি সাহিত্য উচ্চত, কঠিনতা এবং একটা নির্দিষ্ট আকার প্রাপ্ত হইয়াছে। আমাদের বাংলা সাহিত্যে সম্প্রতি পলি পড়িতে আরম্ভ করিয়াছে । ইহার কোথাও জলা, কোথাও বালি, কোথাও মাটি । সুতরাং ইহার বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে যে-যাহা ইচ্ছা বলিতে পারে, কাহারও প্রতিবাদ করিবার সাধ্য নাই। ইহার ইতিহাস নাই, আবহমানকালপ্রচলিত প্রবাহ নাই, বহুকালসঞ্চিত রত্নভাণ্ডার নাই, ইহার বিক্ষিপ্ত অংশগুলিকে এখনো একসমালোচনার নিয়মে বাধিবার সময় হয় নাই। স্বতরাং ইংরেজি সমালোচনা-গ্রন্থ হইতে মুখগহবর পূর্ণ করিয়া লইয়া যখন কোনো প্রবল প্রতিপক্ষ ইহার প্রতি মুহুর্মুহু ফুৎকার প্রয়োগ করিতে থাকেন তখন বঙ্গসাহিত্যের ক্ষীণ আশার আলোকটুকু একান্ত কম্পিত ও নির্বাপিতপ্রায় হইয়া আসে। কিন্তু তথাপি বলা যাইতে পারে ফুৎকার যতই প্রবল হউক শীর্ণ দীপশিখা তাহা অপেক্ষ শ্রেষ্ঠ । বর্তমান বাংলালেখকেরা বঙ্গসাহিত্যের প্রথম ভিত্তি নির্মাণে প্রবৃত্ত আছেন । সুতরাং যাহারা ইংরেজি গ্রন্থন্ত,পশিখরের উপর চড়িয়া নিম্নে দৃষ্টিপাত করেন তাহারা ইহাদিগকে ছোটো বলিয়া মনে করিতে পারেন। ইহারা মাটির উপরে দাড়াইয়া খাটিয়া মরিতেছেন তাহারা উচ্চচুড়ায় বসিয়া কেবল হাওয়া খাইতেছেন, এরূপস্থলে উভয়ের মধ্যে সমকক্ষতার ভাব রক্ষণ করা দুরূহ হইয়া পড়ে । , এই দুইদলের মধ্যে যদি প্রকৃত উচ্চনীচতা থাকে তবে আর কোনো কথাই নাই। কিন্তু তাহার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। র্যাহার শুদ্ধমাত্র পরের চিস্তালব্ধ ধন সঞ্চয় করিয়া জীবনযাপন করেন র্তাহারা জানেন না নিজে কোনো বিষয় আহ্বপূর্বক চিন্তা করা এবং সেই চিন্তা ভাষায় ব্যক্ত করা কী কঠিন। অনেক বড়ে বড়ো কথা পরের মুখ হইতে পরিপক্ক ফলের মতো অতিসহজে পাড়িয়া লওয়া যায় কিন্তু অতি ছোটো কথাটিও নিজে ভাবিয়া গড়িয়া তোলা বিষম ব্যাপার। যে-ব্যক্তি কেবলমাত্র পাঠ করিয়া শিথিয়াছে, সঞ্চয় করা ছাড়া বিদ্যাকে আর কোনোপ্রকার ব্যবহারে লাগায় নাই, সে নিজে ঠিক জানে না সে কতটা জানে এবং কতটা জানে না ।