পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b'8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আলোচনা করি, তার পরে একসময়ে সাহিত্যের মধ্যে, মানসিক ঐক্যের মধ্যে আনন্ম লাভ করি। পূর্বে সাহিত্য অবশুম্ভাবী ছিল, এখন সাহিত্য অত্যাবস্তক হয়েছে। মচুন্যত্ব বিভক্ত হয়ে গেছে, এইজন্তে সাহিত্যের মধ্যে সে আপনার পরিপূর্ণতার জাস্বাদলাভের জন্ত ব্যাকুল হয়ে আছে। এখনই সাহিত্যের বড়ো বেশি আবশ্যক এবং তার আদরও দেশি । এখন এই পূর্ণমনুষ্যত্বের সংস্পর্শ সচরাচর কোথাও পাওয়া যায় না । সমাজে আমরা আপনাকে খণ্ডভাবে প্রকাশ করি। বাধাবাধি নিয়মের মধ্যে যতটা দূর যাওয়া যায় তার বেশি অগ্রসর হতে পারি নে। চুটকি হাসি এবং খুচরো কথার মধ্যে আপনাকে আবৃত করে রাথি । মানুষ সামনে উপস্থিত হবামাত্রই আমরা এমনি সহজে স্বভাবতই আত্মসম্বত হয়ে বসি যে, একটা গুরুতর ঘটনার দ্বারা অকস্মাৎ অভিভূত না হলে, কিংবা একটা প্রবল আবেগের দ্বারা সর্ববিশ্বত না হলে আমরা নিজের প্রকৃত আভাস নিজে পাই নে। শেকস্পীয়রের সময়েও এ-রকম সব আকস্মিক ঘটনা এবং প্রবল আবেগ সচরাচর উদভব হতে পারত, এবং বিদ্যুৎ-আলোকে মানুষের সমগ্র আগাগোড়া এক পলকে দৃষ্টিগোচর হত ; এখন স্বসভ্য স্বসংষত সমাজে আকস্মিক ঘটনা ক্রমশই কমে আসছে, এবং প্রবল আবেগ সহস্ৰ বাধে আটকা পড়ে পোষমান ভালুকের মতো নিজের নখদন্ত গোপন করে সমাজের মনোরঞ্জন করবার জন্তে কেবল নৃত্য করে ; যেন সে সমাজের নট, যেন তার একটা প্রচণ্ড ক্ষুধা এবং রুদ্ধ আক্রোশ ওই বছরোমশ আচ্ছাদনের নিচে নিশিদিন জলছে না । সাহিত্যের মধ্যে শেকস্পীয়রের নাটকে, জর্জ এলিয়টের নভেলে, মুকবিদের কাব্যে সেই প্রচ্ছন্ন মকুন্যত্ব মুক্তিলাভ করে দেখা দেয়। তারই সংঘাতে আমাদের আগাগোড়া জেগে ওঠে ; আমরা আমাদের প্রতিহত হাড়গোড়-ভাঙা ছাইচাপা অঙ্গহীন জীবনকে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করি। এইরূপ স্ববৃহৎ অনাবরণের মধ্যে অশ্লীলতা নেই। এইজন্তে শেকস্পীয়র অঙ্গীল নয়, রামায়ণ মহাভারত অঙ্গীল নয়। কিন্তু ভারতচন্দ্র অশ্লীল, জোলা অঙ্গীল— কেননা তা কেবল আংশিক অনাবরণ। আর-একটু খোলসা করে বলা আবশ্বক। সাহিত্যে আমরা সমগ্র মানুষকে প্রত্যাশা করি। কিন্তু সব সময়ে সবটাকে পাওয়া যায় না—সমস্তটার একটা প্রতিনিধি পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিনিধি কাকে করা যাবে ? যাকে সমস্ত মানুষ বলে মানতে আমাদের আপত্তি নেই । ভালোবাসা স্নেহ দয়া ঘৃণা ক্রোধ হিংসা এরা আমাদের মানসিক বৃত্তি ; এরা যদি অবস্থানুসারে