পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8న o রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রাকৃত ভাষার সহিত বাংলার জন্মগত যোগ আছে সে-সম্বন্ধে দীনেশচন্দ্রবাৰু ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল এবং ডাক্তার হর্নলের সহিত একমত । হর্নলে সাহেব প্রমাণ করিয়াছেন, প্রাচীন ভারতবর্ষে কথিত প্রাকৃত ভাষা দুই প্রধান শাখায় বিভক্ত ছিল। শৌরসেনী ও মাগধী । মহারাষ্ট্র লিখিত ভাষা ছিল মাত্র এবং প্রাকৃত ভাষা ভারতবর্ষীয় অনার্যদের মুখে বিকৃতি প্রাপ্ত হইয়া যে-ভাষায় পরিণত হইয়াছিল তাহার নাম ছিল পৈশাচী । প্রাচীন ব্যাকরণকারগণ যে-সকল ভাষাকে অপভ্রংশ ভাষা বলিতেন তাহাদের নাম এই –আভৗরী (সিন্ধি, মাড়োয়ারি ), আবস্তী ( পূর্ব রাজপুতানি ), গৌজরী ( গুজরাটি ), বাহিলকা ( পাঞ্জাবি ), শৌরসেনী ( পাশ্চাত্ত্য হিন্দি ), মাগধী অথবা প্রাচ্য ( প্রাচ্য হিন্দি ), ওড্রী ( উড়িয়া ), গৌড়ী ( বাংলা ), দাক্ষিণাত্যা অথবা বৈদভিক (মারাঠি ), এবং সৈপ্পলী ( নেপালি ? )। 曾 উক্ত অপভ্রংশ-তালিকার মধ্যে শৌরসেনী ও মাগধী নাম আছে কিন্তু মহারাষ্ট্রী নাম ব্যবহৃত হয় নাই । মহারাষ্ট্রী যে ভারতবর্ষীয় কোনো দেশবিশেষের কথিত ভাষা ছিল না তাহ হর্নলে সাহেব প্রতিপন্ন করিয়াছেন। বিশেষত আধুনিক মহারাষ্ট্রদেশপ্রচলিত ভাষার অপেক্ষ পাশ্চাত্ত্য হিন্দি ভাষার সহিত তাহার ঘনিষ্ঠতর সাদৃশ্য আছে। প্রাকৃত নাটকে দেখা যায় শৌরসেনী গষ্ঠাংশে এবং মহারাষ্ট্রী পষ্ঠাংশে ব্যবহৃত হইয়া থাকে, ইহা হইতেও কতকটা প্রমাণ হয় মহারাষ্ট্রী সাহিত্যভাষা ছিল, কথায় বার্তায় তাহার ব্যবহার ছিল না । কিন্তু, আমাদের মতে, ইহা হইতে প্রমাণ হয় না যে, মহারাষ্ট্রী কোনো কালেই কথিত ভাষা ছিল না এবং তাহা সাহিত্যকারদের রচিত কৃত্রিম ভাষা । সর্বদা ব্যবহারের ঘর্ষণে চলিত কথায় ভাষার প্রাচীন রূপ ক্রমশ পরিবর্তিত হইতে থাকে, কিন্তু কাব্যে তাহা বহুকাল স্থায়িত্ব লাভ করে। বাহিরের বিচিত্র সংস্রবে পুরুষসমাজে যেমন ভাষা এবং প্রথার যতটা দ্রুত রূপান্তর ঘটে অন্তঃপুরের স্ত্রীসমাজে সেরূপ ঘটে না ;–কাব্যেও সেইরূপ। আমাদের বাংলা কাব্যের ভাষায় তাহার অনেক দৃষ্টান্ত পাওয়া যাইবে । বাংলা কাব্যে, “ছিল” শব্দের স্থলে “আছিল”, প্রথম পুরুষ “করিল” শব্দের স্থলে “করিলা”, “তোমাদিগকে” স্থলে “তোমা সবে” প্রভৃতি যে-সকল রূপান্তর প্রচলিত আছে তাহাই যে কথিত বাংলার প্রাচীন রূপ ইহা প্রমাণ করা শক্ত নহে। এই দৃষ্টাস্ত হইতেই সহজে অনুমান করা যায় যে, প্রাকৃত সাহিত্যে মহারাষ্ট্ৰী নামক পদ্য ভাষা শৌরসেনী-অপভ্রংশ অপেক্ষা প্রাচীন আদর্শমূলক হওয়া অসম্ভব নহে। পূর্বেই বলা হইয়াছে শৌরসেনী-অপভ্রংশ প্রাকৃত সাহিত্যের গদ্য ভাষা। সাহিত্য