পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8® रे রবীন্দ্র-রচনাবলী বাংলার স্বজাতীয় ভাষা । আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কাফিরিস্থানের কাফিরি ভাষা এবং আফগানিস্থানের পুশতু মাগধী-প্রাকৃতের লক্ষণাক্রাস্ত, এবং সে-হিসাবে বাংলার কুটুম্বশ্রেণীয়। শৌরসেনী-প্রাকৃত মাঝে পড়িয়া মাগধী-প্রাকৃতের বিস্তারকে খণ্ডীকৃত করিয়া দিয়াছে । এক্ষণে বাংলার ভাষাতত্ত্ব প্রকৃতরূপে নিরূপণ করিতে হইলে প্রাকৃত, পালি, প্রাচ্য।হন্দি, মৈথিলী, আসামি, উড়িয়া এবং মহারাষ্ট্রী ব্যাকরণ পর্যালোচনা ও তুলনা করিতে হয় । কথাটা শুনিতে কঠিন, কিন্তু বাংলার ভাষাতত্ত্বনির্ণয় জীবনের একটা প্রধান আলোচ্যবিষয়ৰূপে গণ্য করিয়া লইলে এবং প্রত্যহ অস্তত ছুই-এক ঘণ্ট নিয়মিত কাজ করিয়া গেলে এ কার্য একজনের পক্ষে অসাধ্য হয় না । বিশেষত উক্ত ভাষা কয়টির তুলনামূলক এবং স্বতন্ত্র ব্যাকরণ অনেকগুলিই পাওয়া যায়। এবং এইরূপ সম্পূর্ণ একাগ্রতা ও অধ্যবসায়ের গুটিকতক দৃষ্টান্ত না থাকিলে আমাদের বঙ্গসাহিত্য যথোচিত গৌরব লাভ করিতে পরিবে না। ংলার ভাষাতত্ত্ব-সন্ধানের একটি ব্যাঘাত, প্রাচীন পুথির দুষ্প্রাপ্যতা । কবিকঙ্কণচণ্ডী, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি প্রাচীন কাব্যগুলি জনসাধারণের সমাদৃত হওয়াতে কালে কালে অল্পে অল্পে পরিবর্তিত ও সংশোধিত হইয়া আসিয়াছে। প্রাচীন আদর্শ পুথি কোনো এক পুস্তকালয়ে যথাসম্ভব সংগৃহীত থাকিলে অনুসন্ধিৎস্থর পক্ষে স্ববিধার বিষয় হয়। সাহিত্য-পরিষদের অধিকারে এইরূপ একটি পুস্তকালয় স্থাপিত হইতে পরিবে ইহাই আমরা আশা করি । এই সকল গুরুতর বিল্পসত্ত্বে কোনো চিন্তাশীল সন্ধানতৎপর ব্যক্তি যদি বাংলা ভাষাতত্ত্বনির্ণয়ে নিযুক্ত হন, তবে তাহার কার্য অসম্পূর্ণ হইলেও ভবিষ্যতের পথ খনন করিয়া রাখিবে । রোগের তাপ, জীবিকার চেষ্টা এবং কর্মাস্তরের অনবকাশের মধ্যেও দীনেশচন্দ্রবাবু সেই দুঃসাধ্য কার্যে হস্তক্ষেপ করিয়া মহৎ অনুষ্ঠানের স্বচনা করিয়াছেন। সেইজন্ত তিনি আমাদের সন্মান এবং কৃতজ্ঞতার পাত্র হইয়াছেন । দীনেশচন্দ্রবাবুর গ্রন্থ অবলম্বন করিয়া বাংলা ভাষাতত্ব বিস্তৃতভাবে আলোচনা করিবার ইচ্ছা রহিল । >\oe &