পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ♔ ി সাহিত্য-পরিষৎ বাংলাদেশের স্থানে স্থানে সাহিত্য-পরিষদের শাখাস্থাপন ও বৎসরে বৎসরে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় পরিষদের বাৎসরিক মিলনোৎসব সাধনের প্রস্তাৰ অন্তত দুইবার আমার মুখ দিয়া প্রচার হইয়াছে। তাহাতে কী উপকারের আশা করা যায় এবং তাহার কার্যপ্রণালী কিরূপ হওয়া উচিত, তাহাও সাধ্যমতো আলোচনা করিয়াছি। অতএব তৃতীয়বারে আমাকে বিশ্রাম করিতে দেওয়া উচিত ছিল। একই জমিতে একই ফসল বারবার চাষ করিতে গেলে ফলন ভালো হয় না, নিঃসন্দেহই আমার মুহৃদগণ সে-কথা জানেন–কিন্তু তাহারা যে ফলের প্রতি দৃষ্টি না করিয়াও আমাকে সভাস্থলে পুনশ্চ আকর্ষণ করিলেন, এর কারণ তো আর কিছু বুঝি না,—এ কেবল আমার প্রতি পক্ষপাত । এই অকারণ পক্ষপাতব্যাপারটার অপব্যয় অন্তের সম্বন্ধে সহ করা অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু নিজের সম্বন্ধে সেটা তেমন অত্যুগ্র অন্যায় বলিয়া ঠেকে না-মহন্তস্বভাবের এই আশ্চর্ধ ধর্মবশত আমি বন্ধুদের আহবান অমান্ত করিতে পারিলাম ন-ইহাতে যদি আমার অপরাধ হয় ও আমাকে অপবাদ সহ করিতে হয়, তাহাও স্বীকার করিতে হইবে । পূর্বে আমাদের দেশে পালপার্বণ অনেক রকমের ছিল—তাহাতে আমাদের একঘেয়ে একটানা জীবনের মাঝে মাঝে নাড়া দিয়া ঢেউ তুলিয়া দিত। আজকাল সময়াভাবে, অন্নাভাবে ও শ্রদ্ধার অভাবে সে-সকল পার্বণ কমিয়া আসিয়াছে। এখন সভা-সমিতি-সন্মিলন সেই সকল পার্বণের জায়গা দখল করিতেছে। এইজন্ত শহরেমফস্বলে কতরকম উপলক্ষ্যে কতপ্রকার নাম ধরিয়া কত সভাস্থাপন হইতেছে, সেই সকল সভায় দেশের বক্তাদের বক্তৃতার পালা জমাইবার জন্ত কত চেষ্টা ও কত আয়োজন হইয়া থাকে, তাহা সকলেই জানেন। অনেকে এই সকল চেষ্টাকে নিন্দা করেন ও এই সকল আয়োজনকে হুজুগ বলিয়া উড়াইয়া দিয়া থাকেন। বাংলা ভাষায় এই হুজুগ শব্দটা কোথা হইতে আসিল, তাহা আমাদের পরিষদের শব্দতাৰিক মহাশয়গণ স্থির করিবেন–কিন্তু এটা ষে আমাদের সমাজের শনিগ্রহের রচনা, আমার তাহাতে সন্দেহ নাই। নিজের জড়ত্বকে অস্ত লোকের উৎসাহের চেয়ে বড়ো পদৰি দিবার জন্তই প্রায় আচল লোকেরা এই শব্দটা ব্যবহার করিয়া দেশের সমস্ত উস্তমের মূলে হল ফুটাইবার চেষ্টা করিয়া থাকে। দেশের মধ্যে কিছুকাল হইতেই এই ষে চাঞ্চল্য দেখা যাইতেছে, এটা যদি হজুগ