পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& S • রবীন্দ্র-রচনাবলী রণতরীর কাপ্তেন ডেভিস তাহার মানোয়ারি গোরার দল লইয়া উপকার করিবার উৎসাহবশত কিছু অতিশয় পরিমাণে সাহায্য করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন—ইহ সেখানকার ঘোরতর দুর্যোগেও জামেকাদ্বীপের ইংরেজ অধ্যক্ষ সহ করিতে পারেন নাই। ইহার ভাবখানা এই যে, অত্যন্ত দুঃসময়েও পরের কাছে সাহায্য লইবার কালে নিজের ক্ষমতার অপমান করা চলে না—তা যদি করি, তবে যাহা পাই তাহার চেয়ে দিই অনেক বেশি। পরের কাছে আমুকুল্য লওয়া নিতান্ত নিশ্চিস্তমনে করিবার নহে । এইরূপ, দান পাইয়া যদি ক্ষমতা বিক্রয় করি, আমার দেশের কাজ আমি করিবই এবং আমিই করিতে পারি এই পুরুষোচিত অভিমান যদি অনর্গল আবেদনের অজস্র অশ্রুজলধারায় বিসর্জন দিই, তবে তেমন করিয়া পাওয়ার ধিক্কার হইতে ঈশ্বর যেন আমাদিগকে নৈরাশ্ৰাদ্বারাই রক্ষা করেন । বস্তুত এমন করিয়া কখনোই আমরা কোনো আসল জিনিস পাইতেই পারি না । গ্রামে কোনো উৎপাত ঘটিলে আমরা রাজসরকারে প্রার্থনা করিয়া দুজন পুলিসের লোক বেশি পাইতে পারি, কিন্তু নিজেরাই যদি সমবেত হইয়া আত্মরক্ষার স্ব ব্যবস্থা করিতে পারি, তবে রক্ষাও পাই রক্ষার শক্তিও হারাইতে হয় না। বিচারের স্বযোগের জন্য দরখাস্ত করিয়া আদালত বাড়াইয়া লইতে পারি, কিন্তু নিজেরা যদি নিজের সালিসিসভায় মকদ্দমা মিটাইবার বন্দোবস্ত করি, তবে অসুবিধাও জড় মরিয়া যায়। মন্ত্রণাসভায় দুজন দেশী লোক বেশি করিয়া লইলেই কি আমরা রেপ্রেজেন্টেটিভ গবর্মেন্ট পাইলাম বলিয়া হরির লুট দিব ? বস্তত আমাদের নিজের পাড়ার, নিজের গ্রামের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-অশন-বসন-সম্বন্ধীয় সমস্ত শাসনব্যবস্থা আমরা যদি নিজেরা গড়িয়া তুলিতে পারি, তবেই যথার্থ খাটি জিনিসটি আমরা পাই। অথচ এই সমস্ত অধিকার গ্রহণ করা পরের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করে না। এ আমাদের নিজের ইচ্ছা, চেষ্টা ও ত্যাগস্বীকারের অপেক্ষা করে। আমাদের দেশজোড়া এই সমস্ত কাজই আমাদের পথ চাহিয়া বসিয়া আছে, কিন্তু সে-পথও আমরা মাড়াই না, পাছে সেই কর্তব্যের সঙ্গে চোখে-চোখেও দেখা হয় । যাহাদের এমনি দুরৰস্থা, তাহার। পরের কাছ হইতে কোনো দুর্লভ জিনিস চাহিয়া লইয়। সেটাকে যথার্থভাবে রক্ষা করিতে পারিবে, এমন ছুরাশা কেন তাহাদের মনে স্থান পায় ? যে-কাজ আমাদের হাতের কাছেই আছে এবং বাহা আমরা ছাড়া আর কেহই ঠিকমতো সাধন করিতে পারে না, তাহাকেই সত্যরূপে সম্পন্ন করিতে থাকিলে তবেই আমরা সেই শক্তি পাইব,—