পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●>や ब्रवैौटल-ब्रछनांवली লাগামের খাতিরে ওয়েলারের জুড়ি না হইলে মুখরক্ষা হয় না—এদিকে ‘অন্তভক্ষ্যধন্থগুণঃ’ । যেমন করিয়া হউক, একটা প্রকাগু ঠাট গড়িয়া তুলিতে হয় ; ছোটোকে ক্রমে ক্রমে বড়ো করিয়া তুলিবার, কাচাকে দিনে দিনে পাকা করিয়া তুলিবার ষে স্বাভাবিক প্রণালী, তাহা বিসর্জন দিয়া যতবড়ো প্রকাও স্পর্ধা খাড়া করিয়া তুলি, ততবড়োই প্রকাও ব্যর্থতার আয়োজন করা যায়। যদি বলি, গোড়ার দিকে স্বর আর-একটু নামাইয়া ধর না কেন ? তবে উত্তর পাওয়া যায়, তাহাতে লোকের মন পাইব না । হায় রে লোকের মন! তোমাকে পাইতেই হইবে বলিয়া পণ করিয়া বসাতেই তোমাকে হারাই । তোমাকে চাই না বলিবার জোর যাহার আছে, সেই তোমাকে জয় করে। এইজন্যই যে ছোটো, সেই বড়ো হইতে থাকে ; যে গোপনে শুরু করিতে পারে, সেই প্রকাস্তে সফল হইয়া উঠে । সকল দেশেরই মহত্ত্বের ইতিহাসে যেটা আমাদের চক্ষুর গোচর, তাহা দাড়াইয়া আছে কিসের উপরে ? যেটা আমাদের চক্ষুর গোচর নহে, তাহারই উপর । আমরা যখন নকল করিতে বসি, তখন সেই দৃষ্টিগোচরটারই নকল করিতে ইচ্ছা যায়—যাহা চোখের আড়ালে আছে, তাহা তো আমাদের মনকে টানে না । এ-কথা ভুলিয়া যাই, যাহাদের নামধাম কেহই জানে না, দেশের সেই শতসহস্ৰ অখ্যাত লোকেরাই নিজের জীবনের অজ্ঞাত কাজগুলি দিয়া ষে-স্তর বাধিয়া দিতেছে, তাহারই উপরে নামজাদা লোকেরা বড়ো বড়ো ইমারত বানাইয়া তুলিতেছে। এখন যে আমাদিগকে ভিত কাটিয়া গোড়াপত্তন করিতে হইবে— সে-ব্যাপারটা তো আকাশের উপরকার নহে, তাহা মাটির নিচেকার,—তাহার সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টারহলের তুলনা করিবার কিছুই নাই। গোড়ায় সেই গভীরতা, তার পরে উচ্চত। এই গভীরতার রাজ্যে স্পর্ধ নাই, ঘোষণা নাই—সেখানে কেবল নম্রতা অথচ দৃঢ়তা, আত্মগোপন এবং আত্মত্যাগ। এই সমস্ত ভিতের কাজে, ভিতরের কাজে, মাটির সংস্রবের কাজে আমাদের মন উঠতেছে না—আমরা একদম চুড়ার উপর জয়ডঙ্কা বাজাইয়া ধ্বজা উড়াইয়া দিতে চাই। স্বয়ং বিশ্বকৰ্মাও তেমন করিয়া বিশ্বনির্মাণ করেন নাই। তিনিও যুগে যুগে অপরিস্ফুটকে পরিস্ফুট করিয়া তুলিতেছেন। তাই বলিতেছি, সকল দেশেই গোড়ার কাজটা ঠিকমতো চলিতেছে বলিয়াই ডগার কাজটা রক্ষা পাইতেছে ; নেপথ্যের ব্যবস্থা পাকা বলিয়াই রঙ্গমঞ্চের কাজ দিব্য চলিয়া যাইতেছে । স্বাস্থ্যরক্ষা, অল্প-উপার্জন, জ্ঞানশিক্ষার কাজে দেশ ব্যাপিয়া হাজার-হাজার লোক মাটির নিচেকার শিকড়ের মতো প্রাণপণে লাগিয়া আছে