পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থ-পরিচয় [ রচনাবলীর বর্তমান খণ্ডে ফুদ্রিত গ্রন্থগুলির প্রথম সংস্করণ, বর্তমানে স্বতন্ত্র গ্রন্থাকারে প্রচলিত সংস্করণ, রচনাবলী-সংস্করণ, এই তিনটির পার্থক্য সংক্ষেপে ও সাধারণভাবে নির্দেশ করা গেল। এই খণ্ডে মুদ্রিত কোনো কোনো রচনা সম্বন্ধে কবির নিজের মস্তব্যও মুদ্রিত হইল। পূর্ণতর তথ্যসংগ্রহ সর্বশেষ খণ্ডে একটি পঞ্জীতে সংকলিত হইবে । ] নৈবেদ্য নৈবেদ্য ১৩০৮ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । “বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি সে আমার নয়” কবিতা প্রসঙ্গে, বঙ্গভাষার লেখক’ গ্রন্থে প্রকাশিত, রবীন্দ্রনাথ কতৃক লিখিত আত্মপরিচয়ের নিম্নমুদ্রিত অংশ উদ্ধারযোগ্য : “প্রকৃতি তাহার রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ লইয়া, মানুষ তাহার বুদ্ধিমন, তাহার স্নেহপ্রেম লইয়া আমাকে মুগ্ধ করিয়াছে—সেই মোহকে আমি অবিশ্বাস করি না, সেই মোহকে আমি নিন্দা করি না । তাহা আমাকে বদ্ধ করিতেছে না, তাহা আমাকে মুক্তই করিতেছে ; তাহা আমাকে আমার বাহিরেই ব্যাপ্ত করিতেছে । নৌকার গুণ নৌকাকে বাধিয়া রাখে নাই, নৌকাকে টানিয়াটানিয়া লইয়া চলিয়াছে । জগতের সমস্ত আকর্ষণপাশ আমাদিগকে তেমনি অগ্রসর করিতেছে । কেহ বা দ্রুত চলিতেছে বলিয়া সে আপন গতিসম্বন্ধে সচেতন,—কেহ বা মন্দগমনে চলিতেছে বলিয়া মনে করিতেছে, বুঝি বা সে একজায়গায় বাধাই পড়িয়া আছে । কিন্তু সকলকেই চলিতে হইতেছে,— সকলই এই জগৎসংসারের নিরস্তুর টানে প্রতিদিনই নুনাধিকপরিমাণে আপনার দিক হইতে ব্ৰন্ধের দিকে ব্যাপ্ত হইতেছে । আমরা যেমনই মনে করি, আমাদের ভাই, আমাদের প্রিয়, আমাদের পুত্র আমাদিগকে একটি জায়গায় বাধিয়া রাখে নাই ; যে জিনিসটাকে সন্ধান করিতেছি, দীপালোক কেবলমাত্র সেই জিনিসটাকে প্রকাশ করে, তাহা নহে, সমস্ত ঘরকে আলোকিত করে ;– প্রেম প্রেমের বিষয়কে অতিক্রম করিয়াও ব্যাপ্ত হয় । জগতের সৌন্দর্ষের মধ্য দিয়া, প্রিয়জনের মাধুর্ষের মধ্য দিয়া, ভগবানই আমাদিগকে টানিতেছেন —জার-কাহারও টানিবার ক্ষমতাই নাই। পৃথিবীর প্রেমের মধ্য দিয়াই সেই জুমানন্দের পরিচয় পাওয়া, জগতের এই রূপের মধ্যেই সেই অপরূপকে সাক্ষাৎ