পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থ-পরিচয় f @文● থাকি তবে সে কি আধুনিক “পাশ্চাত্য শিক্ষাভিমানী বিলাসী-সম্প্রদায়ে না প্রাচীন হিন্দুপরিবারে ?” উত্তর এই—আখ্যায়িকাটি অধিকাংশ গল্পের আখ্যায়িকার মতোই আমার কল্পনাপ্রস্থত। কিন্তু এইটুকুমাত্র বললেই লেখিকার প্রশ্নের সম্পূর্ণ উত্তর দেওয়া হয় না। ওই প্রশ্নের মধ্যে একটি কথা চাপা আছে যে, এমন ঘটনা প্রাচীন হিন্দুপরিবারে অসম্ভব । ঠিক একটা গল্পের ঘটনা সেই গল্পের অনুরূপ অবস্থার মধ্যেই ঘটতে পারে আর কোথাও ঘটতে পারে না—প্রাচীন বা নবীন, হিন্দু ৰ অহিন্দু কোনো পরিবারেই না। অতএব কোনো বিশেষ পরিবারে কী ঘটেছে সে-কথা স্মরণ করে গুজব করাই চলে গল্প লেখা চলে না । মানবচরিত্রে যে-সমস্ত গম্ভবপরতা আছে সেইগুলিকেই ঘটনাবৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে গল্পে নাটকে বিচিত্র করে তোলা হয় । মানবচরিত্রের মধ্যে চিরন্তনত্ব আছে কিন্তু ঘটনার মধ্যে নেই । ঘটনা নানা আকারে নানা জায়গায় ঘটে, একই ঘটনা দুই জায়গায় ঠিক একই রকম ঘটে না । কিন্তু তার মূলে ষে-মানবচরিত্র আছে সে চিরকালই নিজেকে প্রকাশ করে এসেছে । এইজন্ত সেই মানবচরিত্রের প্রতিই লেখক দৃষ্টি রাখেন, কোনো ঘটনার নকল করার প্রতি নয়। সাহিত্য-বিচার তা হলে প্রশ্ন এই যে, প্রাচীন হিন্দুপরিবারে সর্বত্রই মানবচরিত্র কি মকুসংহিতার রাশ মেনে চলে ? কখনো লাগাম ছিড়ে খানার মধ্যে গিয়ে পড়ে না ? আমরা বৈদিক পৌরাণিক কাল থেকে এইটেই দেখে আসছি যে, বুনো ওলের সঙ্গে বাঘ তেঁতুলের লড়াইয়ের অস্ত নেই। একদিকে শাসনও কড়, অন্যদিকে মানবের প্রকৃতিও উদ্ধাম, তাই কখনো শাসন জেতে, কখনো প্রকৃতি। এই লড়াই যদি প্রাচীন হিন্দুপরিবারে সম্পূর্ণ অসম্ভব হয় তবে সেই প্রাচীন হিন্দুপরিবারের ঠিকানা এখনো পাওয়া যায় নি। তাছাড়া এ-কথাও মনে রাখা আবশ্যক যেখানে মন্দ একেবারেই নেই সেখানে ভালোও নেই। প্রাচীন হিন্দুপরিবারে কারও পক্ষে মন্দ হওয়া যদি একেবারেই অসম্ভব হয় তাহলে সে-পরিবারের লোক ভালোও নয়, মন্দও নয়, তারা সংহিতার কলের পুতুল । ভালোমদের দ্বন্ধের মধ্য থেকে মানুষ ভালোকে বেছে নেবে বিবেকের দ্বারা, প্রথার দ্বারা নয়, এই হচ্ছে মন্থন্তৰ ।