পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&Sఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রাচীন সংস্কৃত উদ্ভট কবিতায় যে-সকল কুৎসিত স্ত্রীনিন্দা দেখতে পাই বর্তমান কোনো পাশ্চাত্ত্য শিক্ষাভিমানীর লেখায় তার আভাসমাত্র পাওয়া, যায় না। তার কারণ আধুনিক কবির স্ত্রীজাতিকে আন্তরিক শ্রদ্ধা করে থাকেন। এ-কথা নিশ্চিত সত্য, ষে, সেই সকল প্রাচীন স্ত্রীনিন্দাগুলি স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে মিথ্যা কিন্তু যদি স্ত্রীবিশেষ সম্বন্ধেও মিথ্যা হয় তবে সেই কবিতাগুলির উদভব হল কোথা হতে ? তাহলে বোধ হয় তর্কট এই রকম দাড়াবে,—মানবপ্রকৃতির মধ্যে নিয়ম লঙ্ঘন করবার একটা বেগ আছে কিন্তু সেটা কি সাহিত্যে বর্ণনা করবার বিষয় ? এ তর্কের উত্তর আবহমানকালের সমস্ত সাহিত্যই দিচ্ছে, অতএব আমি নিরুত্তর থাকলেও ক্ষতি হবে না । দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে অধিকাংশ সমালোচকের হাতে সাহিত্যবিচার স্মৃতিশাস্ত্রবিচারের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বঙ্কিমের কোন নায়িকা হিন্দুরমণী হিসাবে কতটা উৎকর্ষ প্রকাশ করেছে তাই নিয়ে সমালোচক-মহলে স্বাক্ষাতিস্বল্প বিশ্লেষণ চলে থাকে। ভ্রমর তার স্বামীর প্রতি অভিমান করেছিল সেটাতে তার হিন্দুসতীত্বে কতটা খাদ ধরা পড়েছে, স্বর্যমুখী স্বামীর প্রেয়সী সতিনকে নিজেরও প্রেয়সী করতে না পারাতে তার হিন্দুরমণীত্বের কতটা লাঘব হয়েছে, শকুন্তলা কী আশ্চর্য হিন্দুনারী, দুন্যস্ত কী আশ্চর্ষ হিন্দুরাজা, এই সকল বিচারপ্রহসন আমাদের দেশে সাহিত্যবিচারের নাম ধরে নিজের গাম্ভীর্য বঁাচিয়ে চলতে পারে—জগতে আর কোথাও এমন দেখা যায় না। শেকস্পীয়র অনেক নায়িকার স্বষ্টি করেছেন কিন্তু তাদের মধ্যে ইংরেজরমণীত্ব কতটা প্রকট হয়েছে এ নিয়ে কেউ চিস্তা করে না, এমন কি, তাদের খ্ৰীষ্টানির মাত্রা নিক্তির ওজনে পরিমাপ করে পয়লা দোসরা মার্ক দেওয়া খ্ৰীস্টান পাদ্রিদের দ্বারাও ঘটা সম্ভব নয় । আমি হয়তো এ-কথা বলে ভালো করলুম না। কেন না, জগতে যা কোথাও নেই সেইটেই ভারতে আছে এই হচ্ছে আধুনিক বাঙালির গর্ব। কিন্তু ভারত তো বাঙালির স্বষ্টি নয়, আমরা সাহিত্য-সমালোচনা শুরু করবার পূর্বেও ভারতবর্ষ ছিল। সেই ভারতের অলংকারশাস্ত্রে নায়িকাবিচার মমুপরাশরের সঙ্গে মিলিয়ে করা হয় নি, মানবচরিত্রের বৈচিত্র্য অনুসারেই তাদের শ্রেণীবিভাগের চেষ্টা হয়েছিল । আমি এ-রকম শ্রেণীবিভাগ ভালো বলি নে ; কারণ সাহিত্য তো বিজ্ঞান নয় ; সাহিত্যে শ্রেণীর ছাচে নায়কনায়িকার