পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থ-পরিচয় ৫২৯ বৈচিত্ৰ্য আছে । কিন্তু সকল বৈচিত্র্যসত্ত্বেও সেই সমস্ত আখ্যানে একটি সাধারণ উপাদান দেখিতে পাই ; সেটি আর কিছু নয়, সংসারে ভালোমন্দের স্বস্ব। তাই রামায়ণে দেখিয়াছি, রাম-রাবণের যুদ্ধ ; মহাভারতে দেখিয়াছি, কুরু-পাগুবের বিরোধ। কেবলই সমস্ত একটানা ভালো, কোথাও মন্দের কোনো আভাসমাজ নাই, এমনতরো নিছক চিনির শরবত দিয়াই সাহিত্যের ভোজ সম্পন্ন করা অন্তত কোনো বড়ো যজ্ঞে দেখি নাই । *. এতবড়ো মোটা কথাও ষে আমাকে আজ বিশেষ করিয়া বলিতে হইতেছে সেজন্ত আমি সংকোচ বোধ করিতেছি । শিশুরা যে রূপকথা শোনে, সেই রূপকথাতেও রাক্ষস আছে ; সেই রাক্ষস শুদ্ধ সংযত হইয়া কেবলই মন্থসংহিতা আওড়ায় না –সে বলে, “হাউ মাউ খাউ, মাজুষের গন্ধ পাউ ।” ধর্থনীতির দিক হইতে দেখিলে তাহার পক্ষে এমন কথা বলা নিঃসন্দেহই গুরুতর অপরাধ ; আশা করি যাহারা এই সকল গল্প রচনা করিয়াছিল তাহারা নরমাংসাশী ছিল না এবং যাহারা এই সব গল্প শোনে নরমাংসে তাহীদের স্পৃহা বাড়ে না। তাই বলিতেছি, মাহুষের গন্ধে গল্পের রাক্ষসের লুন্ধত উদ্রেক হওয়া ধর্মশাস্ত্রমতে অপরাধ সন্দেহ নাই। কিন্তু মানুষের গন্ধে গল্পের রাক্ষসের ভ্রাতৃপ্রেম যদি জাগিয়া উঠিত এবং সে যদি স্বমধুর স্বরে বলিয়া উঠিত “অহিংসা পরমো ধৰ্মঃ” তবে সাহিত্যরসনীতি অনুসারে রাক্ষসের সে-অপরাধ কিছুতে ক্ষমা করা চলিত না । কোনো শিশুর কাছে ইহার পরীক্ষণ করিয়া দেখিলেই একমুহূর্তেই আমার কথা সপ্রমাণ হইবে । কিন্তু সেই শিশুই কি বড়ো হইয়া এম. এ. পাস করিবামাত্র গল্পের রাক্ষসট মরাল ফিলজফির নিচে চাপা পড়িয়া সরু স্বরে শান্তিশতক আওড়াইতে থাকিবে ? যাই হউক, সকল ভাষার সকল সাহিত্যেই ভালোমন্দ দুইরকম চরিত্রেরই মানুষ আসরে স্থান পায় । পুণ্যভূমি ভারতবর্ষেও সেইরূপ বরাবর চলিয়া আসিয়াছে। এইজন্যই ঘরে-বাইরে নভেলে যখন সন্দীপের অবতারণা করিয়াছিলাম তখন মুহূর্তের জন্যও আশঙ্কা করি নাই যে সেটা লইয়া আমাদের দেশের উপাধিধারী এত গণ্যমান্ত লোকের কাছে আমাকে এমন জবাবদিহির দায়ে পড়িতে হুইবে । এখন হইতে ভবিষ্যতে এই আশঙ্কা মনে রাখিব, কিন্তু স্বভাৰ সংশোধন করিতে পারিব না ; কেননা আমাদের দেশের বর্তমান কাল ছাড়াও কাল আছে, এবং গণ্যমান্ত লোক ছাড়াও লোক আছে, তাহারা নিশ্চয়ই রাক্ষসের মুখ হইতে এই অত্যন্ত নীতিবিরুদ্ধ কথা শুনিতে চায়—হাউ ۹وسسه b