পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনবাণী YO6ł রুদ্রডমরুর জাগরণী পল্লবমর্মরে তব পেয়েছে কি স্বাক্ষীণ প্ৰতিধ্বনি । কান পেতে ছিলে তুমি- হে বিরহী, বসন্তে কি আজি সুদূরবন্ধুর বার্তা অন্তরে উঠিল তব বাজি— যে বন্ধুর মহাগানে একদিন সূর্যের আলোতে রোমাঞ্চিয়া বাহিরিলে প্ৰাণ যাত্রী, অন্ধকার হতে ? আজি কি পেয়েছ ফিরে প্রাণের পর শহর্ষ সেই যুগারম্ভপ্ৰভাতের আদি-উৎসবের । নিমেষেই অবসাদ দূরে গেল, জীবনের বিজয়পতাকা আবার চঞ্চল হল নীলাম্বরে, খুলে গেল ঢাকা, খুঁজে পেলে যে আশ্বাস অন্তরে কহিছে রাত্রিদিন— “প্ৰাণতীর্থে চলো, মৃত্যু করো জয়, শ্ৰাস্তিক্লান্তিহীন ৷” [ শাস্তিনিকেতন ১৬ ফায়ুন ১৩৩৪ ] চামেলিবিতান চামেলিবিতানের নীচের ছায়ায় আমি বসতুম— ময়ূর এসে বসত উপরে, লতার আশ্রয়বেষ্টনী থেকে পুচ্ছ বেড়াত, তার অজ্ঞাতে আমি নিজেই সেটি প্রতিদিন গ্রহণ করেছি ; এমন অসংকোচে সে যে দেখা দিয়ে যায়। এতে আমি কৃতজ্ঞ ছিলুম, সে যে আমাকে ভয় করে নি এ আমার সৌভাগা : আরো তার কয়েকটি সঙ্গী সঙ্গিনী ছিল, কিন্তু দূরের দুরাশায় ওদের কোথায় টেনে নিয়ে গেল, আমিও চলে এসেছি সেই চামেলির সুগন্ধি ছায়ার আশ্রয় থেকে অন্য জায়গায় । বাইরে থেকে এই পরিবর্তনগুলি বেশি কিছু নয়, তবু অন্তরের মধ্যে ভাঙাচােরার দাগ কিছু কিছু থেকে যায় । শুনেছিলুম আমাদের প্রদেশে কোনো-এক নদীগর্ভজাত দ্বীপ ময়ূরের আশ্রয় । ময়ূর হিন্দুর অবধ্য। মৃগয়াবিলাসী ইংরেজ এই দ্বীপের নিষেধকে উপেক্ষা করতে পারে নি। অথচ গুলি করে ময়ুর মারবাব প্রবল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হওয়াতে পার্শ্ববর্তী দ্বীপে খাদ্যের প্রলোভন বিস্তার করে ভুলিয়ে নিয়ে এসে ময়ুর মারত বাল্মীকির শাপকে এ যুগের কবি পুনরায় প্রচার না করে থাকতে পারল না । মা নিষাদঃ প্ৰতিষ্ঠাং ত্বং অগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ ! ময়ূর কর নি মোরে ভয়, সেই গর্ব, সেই মোর জয় । বাহিরেতে আমলকী, করিতেছে ঝকমকি, বটের উঠেছে কচি পাতা, হোথায় দুয়ার থেকে আমারে গিয়েছ দেখে, খুলিয়া বসেছি মোটা খাতা ।