পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

واجه রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী প্রার্থনা কামনায় কামনায় দেশে দেশে যুগে যুগান্তরে নিরন্তর নিদারুণ দ্বন্দ্ব যবে দেখি ঘরে ঘরে প্রহরে প্রহরে ; দেখি অন্ধ মোহ দুরন্ত প্ৰয়াসে বুভুক্ষার বহ্নি দিয়ে ভস্মীভূত করে অনায়াসে নিঃসহায় দুৰ্ভাগার সকরুণ সকল প্ৰত্যাশা, জীবনের সকল সম্বল ; দুঃখীর আশ্রয়বাসা নিশ্চিন্তে ভাঙিয়া আনে দুৰ্দাম দুরাশাহােমানলে আহুতি-ইন্ধন জোগাইতে ; নিঃসংকোচ গর্বে বলে, আত্মতৃপ্তি ধর্ম হতে বড়ো ; দেখি আত্মম্ভরী প্ৰাণ তুচ্ছ করিবারে পারে মানুষের গভীর সম্মান গৌরবের মৃগতৃষ্ণিকায় ; সিদ্ধির স্পর্ধার তরে দীনের সর্বস্ব সার্থকতা দলি দেয় ধূলি-’পরে জয়যাত্রাপথে ; দেখি ধিক্কারে ভরিয়া উঠে মন, আত্মজাতি-মাংসলুব্ধ মানুষের প্রাণীনিকেতন উমীলিছে নখে দন্তে হিংস্র বিভীষিকা ; চিত্ত মম নিষ্কৃতিসন্ধানে ফিরে পিঞ্জরিত বিহঙ্গমসম, মুহুর্তে মুহুর্তে বাজে শৃঙ্খলবন্ধন-অপমান সংসারের । হেনকালে জ্বলি উঠে বজাগ্নি-সমান বাসনারে বলি দিয়া বিসর্জিয়া সর্ব আপনার বর্তমানকাল হতে নিষ্ক্রমিলা নিত্যকাল-মাঝে অনন্ত তপস্যা বহি মানুষের উদ্ধারের কাজে অহমিকা-বন্দীশালা হতে । ভগবান বুদ্ধ তুমি, নির্দয় এ লোকালয়, এ ক্ষেত্ৰই তব জন্মভূমি । ভরসা হারাল যারা, যাহাদের ভেঙেছে বিশ্বাস, তোমারি করুণাবিত্তে ভারুক তাদের সর্বনাশআপনারে ভুলে তারা ভুলুক দুৰ্গতি । আর যারা ক্ষীণের নির্ভর ধ্বংস করে, রচে দুর্ভাগ্যের কারা দুর্বলের মুক্তি রুধি, বোসো তাহাদেরি দুৰ্গদ্বারে তপের আসন পাতি ; প্রমাদবিহবল অহংকারে পড়ােক সত্যের দৃষ্টি ; তাদের নিঃসীম অসম্মান তব পুণ্য আলোকেতে লভুক নিঃশেষ অবসান ।