পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুনশ্চ এ ধারের ডাঙায় করবী, সাদা রঙন, একটি শিউলি ; দুটি অযত্নের রজনীগন্ধায় ফুল ধরেছে গরিবের মতো । বঁখারি-বাধা মেহেদির বেড়া, তার ও পারে কলা পেয়ারা নারকেলের বাগান ; আরো দূরে গাছপালার মধ্যে একটা কোঠাবাড়ির ছাদ, উপর থেকে শাড়ি ঝুলছে। মাথায় ভিজে চাদর জড়ানো গা-খোলা মোটা মানুষটি ছিপ ফেলে বসে আছে বাধা ঘাটের পৈঠাতে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যায় কেটে । বেলা পড়ে এল । বৃষ্টি-ধোওয়া আকাশ, বিকেলের প্রৌঢ় আলোয় বৈরাগ্যের মানতা । ধীরে ধীরে হাওয়া দিয়েছে, ঝিলমিল করছে বাতাবি লেবুর পাতা । চেয়ে দেখি আর মনে হয় এ যেন আর-কোনো-একটা দিনের আবছায়া ; আধুনিকের বেড়ার ফাক দিয়ে দূর কালের কার একটি ছবি নিয়ে এল মনে । স্পর্শ তার করুণ, স্নিগ্ধ তার কণ্ঠ, মুগ্ধ সরল তার কালো চোখের দৃষ্টি । তার সাদা শাডির রাঙা চওড়া পাড় দুটি পা ঘিরে ঢেকে পড়েছে ; সে আঙিনাতে আসন বিছিয়ে দেয়, সে আঁচল দিয়ে ধুলো দেয় মুছিয়ে ; সে আম-কঁঠালের ছায়ায় ছায়ায় জল তুলে আনে, তখন দোয়েল ডাকে শজনের ডালে, ফিঙে, লেজ দুলিয়ে বেড়ায় খেজুরের ঝোপে । যখন তার কাছে বিদায় নিয়ে চলে আসি সে ভালো করে কিছুই বলতে পারে না ; কপাট অল্প একটু ফাক করে পথের দিকে চেয়ে দাড়িয়ে থাকে, চোখ বাপসা হয়ে আসে । S TEKS SOOS S8vo)