পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Voy o রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী প্রথম পূজা ত্ৰিলোকেশ্বরের মন্দির । লোকে বলে স্বয়ং বিশ্বকৰ্মা তার ভিত-পত্তন করেছিলেন কোন মান্ধাতার আমলে, স্বয়ং হনুমান এনেছিলেন তার পাথর বহন করে । ইতিহাসের পণ্ডিত বলেন, এ মন্দির কিরাত জাতের গড়া, এ দেবতা কিরাতের । একদা যখন ক্ষত্রিয় রাজা জয় করলেন দেশ দেউলের আঙিনা পূজারিদের রক্তে গেল ভেসে, দেবতা রক্ষা পেলেন নতুন নামে নতুন পূজাবিধির আড়ালেহাজার বৎসরের প্রাচীন ভক্তিধারার স্ৰোত গেল ফিরে । কিরাত আজ আম্পূশ্য, এ মন্দিরে তার প্রবেশপথ লুপ্ত । কিরাত থাকে সমাজের বাইরে, নদীর পূর্বপারে তার পাড়া । সে ভক্ত, আজ তার মন্দির নেই, তার গান আছে । নিপুণ তার হাত, অভ্রান্ত তার দৃষ্টি । সে জানে কী করে পাথরের উপর পাথর বাধে, কী করে পিতলের উপর রুপোর ফুল তোলা যায়কৃষ্ণশিলায় মূর্তি গড়বার ছন্দটা কী । রাজশাসন তার নয়, অস্ত্ৰ তার নিয়েছে কেড়ে, বেশে বাসে ব্যবহারে সম্মানের চিহ্ন হতে সে বর্জিত, বঞ্চিত সে পুঁথির বিদ্যায় । ত্ৰিলোকেশ্বর মন্দিরের স্বর্ণচুড়া পশ্চিম দিগন্তে যায় দেখা, চিনতে পারে নিজেদেরই মনের আকল্প, বহু দূরের থেকে প্ৰণাম করে । কার্তিক পূর্ণিমা, পূজার উৎসব । মঞ্চের উপরে বাজছে বঁাশি মৃদঙ্গ করতাল, মােঠ জুড়ে কানাতের পর কানাত, মাঝে মাঝে উঠেছে ফৰজা । পথের দুই ধারে ব্যাপারীদের পসরাতামার পাত্র, রুপোর অলংকার, দেবমূর্তির পট, রেশমের কাপড় ; ছেলেদের খেলার জন্যে কাঠের ডমরু, মাটির পুতুল, পাতার বাশি ; অর্ঘ্যের উপকরণ, ফল মালা ধূপ বাতি, ঘড়া ঘড়া তীৰ্থবারি । বাজিকর তারস্বরে। প্ৰলাপবাক্যে দেখাচ্ছে বাজি, কথক পড়ছে রামায়ণকথা । উজ্জ্বলবেশে সশস্ত্ৰ প্রহরী ঘুরে বেড়ায় ঘোড়ায় চড়ে ; রাজ-অমাত্য হাতির উপর হাওদায়, সম্মুখে বেজে চলেছে শিঙা ।