পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VSDS N রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী মাটি ফেটে ফেটে ওঠে ধোয়া, ওঠে গরম জলভীম-সরোবরের দিঘি বালির নীচে গেল শুষে । মন্দিরের চূড়ায় বাধা বড়ো ঘণ্টা দুলতে দুলতে TRSAS STS GR UsR | আচমকা ধবনি থামল একটা ভেঙে-পড়ার শব্দে । পৃথিবী যখন স্তব্ধ হল পূৰ্ণপ্ৰায় চাদ তখন হেলেছে পশ্চিমের দিকে । আকাশে উঠছে জ্বলে-ওঠা কানাতগুলোর ধোয়ার কুণ্ডলী, জ্যোৎস্নাকে যেন অজগর সাপে জড়িয়েছে । পরদিন আত্মীয়দের বিলাপে দিগবিদিক যখন শোকার্তা রাজমন্ত্রী এল, দৈবজ্ঞ এল, স্মার্ত পণ্ডিত এল । দেখলে বাহিরের প্রাচীর ধূলিসাৎ ৷ দেবতার বেদীর উপরের ছাদ পড়েছে ভেঙে । পণ্ডিত বললে সংস্কার করা চাই আগামী পূর্ণিমার পূর্বেই, নইলে দেবতা পরিহার করবেন তার মূর্তিকে । রাজা বললেন, ‘সংস্কার করো ।” মন্ত্রী বললেন, “ওই কিরাতরা ছাড়া কে করবে। পাথরের কাজ । ওদের দৃষ্টিকলুষ থেকে দেবতাকে রক্ষা করব কী উপায়ে, কী হবে মন্দিরসংস্কারে যদি মলিন হয় দেবতার অঙ্গমহিমা ।” কিরাতদলপতি মাধবকে রাজা আনলেন ডেকে । বৃদ্ধ মাধব, শুক্লকেশের উপর নির্মল সাদা চাদর জড়ানোপরিধানে পীত ধড়া, তাম্ৰবৰ্ণ দেহ কটি পর্যন্ত অনাবৃত, দুই চক্ষু সকরুণ নম্রতায় পূর্ণ। সাবধানে রাজার পায়ের কাছে রাখলে একমুঠো। কুন্দযুকূল, প্ৰণাম করলে স্পর্শ বাচিয়ে । রাজা বললেন, “তোমরা না হলে দেবালয়-সংস্কার হয় না ।” “আমাদের পরে দেবতার ওই কৃপা এই বলে দেবতার উদেশে মাধব প্ৰণাম জানালে । নৃপতি নৃসিংহরায় বললেন, “চোখ বেঁধে কাজ করা চাই, দেবমূর্তির উপর দৃষ্টি না পড়ে । পারবে ? মাধব বললে, “অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে কাজ করিয়ে নেবেন অন্তৰ্যামী । যতক্ষণ কাজ চলবে, চোখ খুলব না। ’ মন্দিরের ভিতরে কাজ করে মাধব, তার দুই চক্ষু পাকে পাকে কালো কাপড়ে বাধা । দিনরাত সে মন্দিরের বাহিরে যায় না ধ্যান করে, গান গায়, আর তার আঙুল চলতে থাকে ।